আধুনিক ডেস্ক ::
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আপনি বুকভরে নিশ্বাস নিতে পারেন, নদীর পাড়ে কফিমগ হাতে বন্ধুর সঙ্গে অনায়াসে দুই ঘণ্টা গল্প করে কাটিয়ে দেওয়ার মতো আপনার সময় আছে, যেখানে গণপরিবহন একেবারে ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে, আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ বোধ করেন, আছে নাগরিক সব সুযোগ-সুবিধা। এমন একটি শহরে বসবাসের স্বপ্ন সব মানুষই দেখে। কারণ, শহর মানে শুধু উঁচু ইমারত আর ইট-পাথরের জঞ্জালই নয়।
প্রতিবছর দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্স বা বসবাসের জন্য সেরা শহরগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। ইআইইউ পাঁচটি মূল সূচকের ওপর ভিত্তি করে ১৭৩টি শহরের তালিকা করে থাকে। সেগুলো হলো স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো। ২০২৫ সালে বসবাসের জন্য কোন কোন শহর সেরা ১০–এ জায়গা করে নিয়েছে, তা দেখে নেওয়া যাক।
তালিকার প্রথমে রয়েছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন। সবচেয়ে সুখী মানুষের শহরের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করা কোপেনহেগেন এবার লাইভেবিলিটি ইনডেক্সে বা বসবাসের জন্য সেরা শহরের সূচকেও শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সুখ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ বছর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাকে সরিয়ে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন লাইভেবিলিটি সূচকে ১ নম্বরে উঠে এসেছে। স্বপ্নের এ শহরে যদি ট্রেন ১২টা ১৬ মিনিটে আসার কথা থাকে, তবে সেটা ঠিক ১২টা ১৬ মিনিটেই আসে। আপনি যদি স্নিকার্স পরে কোনো বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় যান, কেউ সেদিকে তাকাবেই না। কোপেনহেগেনের শান্ত পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করে। রাস্তাগুলো প্রশস্ত, বাইসাইকেলের সংখ্যা গাড়ির চেয়ে বেশি আর গোটা শহর চলে সাধারণ বুদ্ধির ভিত্তিতে।’শহরে সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়। এখানে কেউ চাপে বা তাড়াহুড়াতে নেই। খোলাবাজার আর পার্কে শিশুদের ছুটাছুটি আর কোলাহল দেখে সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। এ শহর কখনো নিজেকে জাহির করে না, কিন্তু সব সময়ই প্রত্যাশা পূরণ করে।
টানা তিন বছর লাইভেবিলিটি সূচকে সবার ওপরে থাকা ভিয়েনা এবার এক ধাপ পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। তার মানে এ নয় যে ভিয়েনায় জীবনযাপনের মান খানিকটা পড়ে গেছে; বরং কোপেনহেগেন নিজেদের আরও উন্নত করে ভিয়েনাকে ছাড়িয়ে গেছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা স্বাস্থ্যসেবায় নিখুঁত স্কোর ধরে রেখেছে, যা এখনো অন্য সব শহরের চেয়ে এগিয়ে। পাশাপাশি শিক্ষা ও অবকাঠামোতে এটি পূর্ণ নম্বর পেয়েছে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে জুরিখের জুড়ি মেলা ভার। গ্লোবাল লাইভেবিলিটি র্যাঙ্কিংয়ে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম এ শহরটি শিক্ষায় ১০০–তে ১০০ নম্বর পেয়েছে। সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বাসিন্দারা রীতিমতো গর্ব করেন।
সূচকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা মেলবোর্ন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সেরা নম্বর পেয়েছে। সেই সঙ্গে সংস্কৃতি ও পরিবেশে উচ্চ নম্বরের কারণে অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের তুলনায় বসবাসের জন্য সেরা শহরের তালিকায় মেলবোর্ন খানিকটা এগিয়ে গেছে। এ নিয়ে টানা তিন বছর মেলবোর্ন বসবাসের জন্য সেরা পাঁচ শহরের তালিকায় জায়গা পেল। ২৯২৪ সালেও এটি চতুর্থ স্থানে ছিল, এর আগের বছর ৩ নম্বরে। অবকাঠামোতেও ভালো নম্বর পেয়েছে মেলবোর্ন।
জনকল্যাণমূলক নীতি ও সুশৃঙ্খল অবকাঠামোর কারণে সুইজারল্যান্ড ধারাবাহিকভাবে জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে প্রথম সারির দেশ। দেশটির দুটি শহর বসবাসের জন্য সবচেয়ে ভালো শহরের তালিকায় প্রথম পাঁচে স্থান পেয়েছে। ৩ নম্বরে জুরিখের পর ৫ নম্বরে জেনেভা। স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোয় জেনেভা নিখুঁত স্কোর করেছে। পাশাপাশি শহরটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সহজে চলাচলের উপযোগী। তবে জেনেভার বাসিন্দারা মনে করেন, তাঁদের শহরের পরিবেশ অন্যান্য শহর থেকে একটু আলাদা। এটি আয়তনে ছোট ও ঘনিষ্ঠভাবে বিন্যস্ত। এখানে নির্ঝঞ্ঝাট থাকা যায় এবং একটি বৈশ্বিক কেন্দ্রে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে এর সবই রয়েছে এ শহরে।
লাইভেবিলিটি স্কোরে ৯৬ দশমিক ৬ নম্বর পেয়ে তালিকায় ৬ নম্বরে উঠে এসেছে সিডনি। ২০২৪ সালে শহরটি ছিল ৭ নম্বরে। সিডনি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। পাশাপাশি স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯৬ দশমিক ৪ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯৪ দশমিক ৪ নম্বর পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এ শহরটি।
সূচকে শীর্ষ দশে স্থান পাওয়া একমাত্র এশীয় শহর জাপানের ওসাকা। ৭ নম্বরে থাকা ওসাকা স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় নিখুঁত স্কোর অর্জন করেছে। যদিও শহরটি প্রায়ই আলোঝলমলে রাজধানী টোকিওর ছায়ায় ঢাকা পড়ে। তবে ওসাকায় রয়েছে নিজস্ব ছন্দে চলা এক জীবনধারা এবং সেটাই এখানকার বাসিন্দাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
সূচকে ৯৬ নম্বর পেয়ে তালিকায় ৮ নম্বরে উঠে এসেছে অকল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের এ শহরটি শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় ৯৫ দশমিক ৮, স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯২ দশমিক ৯ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯৭ দশমিক ৯ নম্বর পেয়েছে।
শীর্ষ ১০–এ স্থান পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় শহর অ্যাডিলেড। এ বছর শহরটি ৯৫ দশমিক ৯ নম্বর পেয়ে তালিকায় ৯ নম্বরে উঠে এসেছে, আগের বছর ছিল ১১ নম্বরে। অ্যাডিলেড স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। এ ছাড়া স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯৬ দশমিক ৪ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯১ দশমিক ৪ নম্বর পেয়েছে।
ইনডেক্সে শীর্ষ ১০–এ স্থান পাওয়া উত্তর আমেরিকার একমাত্র শহর কানাডার ভ্যাঙ্কুভার। কানাডার আরেক শহর ক্যালগেরির এ বছর বড় পতন হয়েছে। ২০২৪ সালে ক্যালগেরি পঞ্চম স্থানে ছিল। এ বছর নেমে গেছে ১৮তম স্থানে। মূলত স্বাস্থ্যসেবা সূচকে নম্বর কম পাওয়ায় ক্যালগেরির এ পতন। তবে ৯৫ দশমিক ৮ নম্বর পেয়ে শীর্ষ ১০–এ স্থান করে নিয়েছে ভ্যাঙ্কুভার। কানাডার শহরটি শিক্ষায় পূর্ণ ১০০ স্কোর পেয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় ৯৫ দশমিক ৮, স্থিতিশীলতায় ৯৫, অবকাঠামোয় ৯২ দশমিক ৯ এবং সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিভাগে ৯৭ দশমিক ২ নম্বর পেয়েছে।


