শুক্রবার, অক্টোবর ১১, ২০২৪
Google search engine
Homeমৌলভীবাজারছড়ার পাড় ও চায়ের টিলা খুঁড়ে উত্তোলিত হচ্ছে সিলিকা বালু; রাজস্ব বঞ্ছিত...

ছড়ার পাড় ও চায়ের টিলা খুঁড়ে উত্তোলিত হচ্ছে সিলিকা বালু; রাজস্ব বঞ্ছিত সরকার

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, কমলগঞ্জ-
দেশের সম্ভাবনাময়ী প্রাকৃতিক সম্পদ সিলিকা বালু বাণিজ্যে লিপ্ত একটি স্বার্থাম্মেষী সিন্ডিকেট মহল। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট্র একটি পাহাড়ি ছড়া থেকে অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত চলছে বালু বাণিজ্য। ছড়ার পাড় ও চায়ের টিলা খুঁড়েও উত্তোলন করে বালু বিক্রি চলছে। ফলে ছড়ার বাঁধ, কালভার্ট, চায়ের টিলা ও রাস্তাঘাট বিনষ্ট হচ্ছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে স্থানীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি সুনছড়ায় এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আলীনগর চা বাগানের ফাঁড়ি সুনছড়া চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি সুনছড়া। ছড়াটিতে চকচকে মসৃন সিলিকা বালু সমৃদ্ধ। ছড়াটিতে কোনো ইজারাও নেই। তবে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘ সময় ধরে পাহাড়ি সুনছড়ার কালিছালি, বাজার সহ চা বাগান এলাকার পুরো অংশ জুড়ে সিলিকা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছড়ার বাঁধ কেটে ও চা বাগানের টিলা খুঁড়েও উত্তোলন করা হয় বালু। বালু উত্তোলনের পর ট্রাক, পিকআপ ও ট্রলি যোগে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হচ্ছে। এতে চা বাগান সহ গ্রামের রাস্তাঘাটও বিনষ্ট হচ্ছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষের বাঁধানিষেধও মানা হচ্ছে না। এতে ধ্বংস হচ্ছে সম্ভাবনাময়ী প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ, প্রতিবেশ। সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জুন এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ৫১টি পাহাড়ি ছড়া সিলিকা বালু সম্পৃক্ত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এই ছড়া সমুহের মধ্যে সুনছড়াও সম্পৃক্ত। এরমধ্যে ১৯টি ছড়াকে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। তবে ইজারা গ্রহীতারা অনিয়ন্ত্রিত ও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন শুরু করলে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে। পরে ২১ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বে ১৯টি বালুমহালকে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপন (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) ছাড়া পরবর্তী ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। তবে উচ্চ আদালতের এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুনছড়া, কামারছড়া সহ চা বাগানের বিভিন্ন ছড়া থেকে বালু বাণিজ্য চলছে।
পাহাড়ি ছড়ার চা বাগানের ভেতর থেকে অবৈধভাবে টিলা খুঁড়ে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য আলীনগর চা বাগান কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছে। চা বাগানের ব্যবস্থাপক হাবিব আহমেদ চৌধুরী ইতিপূর্বে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারপরও রোধ হয়নি সুনছড়ার অবৈধভাবে বালু বাণিজ্য।
এব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক এড. শাহ সাহেদা আক্তার বলেন, সম্প্রতি সুনছড়ায় বালু উত্তোলনকৃত এলাকা পরিদর্শন করেছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে যে হারে যত্রতত্র বালু উত্তোলন ও পরিবহন হচ্ছে তাতে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহারে খতিয়ে দেখবো। তবে সম্প্রতি সময়ে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দুর্গম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয়

Recent Comments