নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, কমলগঞ্জ:
“দীর্ঘদিন ধরিয়া বালু তোলার কারনে নদীর পার ভাঙ্গিয়া এখন আমরার ঘরের লগে আইছে। আরো একটু আইলেই আমরার ঘর নদীত যাইবো গিয়া। কেউ আমরার কথা শুনেন না। ক্ষতির কথা আর বালু না তোলার কথা কইলে তারা হুমকি দেয়। মারধোরও করে। আর মেশিনের এতো শব্দ, কিচ্ছু হুনা (শোনা) যায় না। ৯ বছরের বাচ্চাটা নদীতে পরি গেছে। আমরা কিচ্ছু কইতে পারি না শব্দের কারনে।” কথাগুলো বলেন কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলাইপার গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া বেগম ও ইয়াছমিন বেগম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ধলাই নদীর কমলগঞ্জের ধলাইর পার থেকে দীর্ঘদিন ধরে কোনো রকমের লিজ ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনে ধ্বসে পড়ছে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ। হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরের অর্ধশতাধিক বসতঘর। মেশিনের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। ভারী যানবাহনে বালু পরিবহনে ধ্বসে পড়ছে সড়কপথ। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে গেলেও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ইজারাযোগ্য সাধারণ বালু মহালের তালিকায় ধলাই নদীর কমলগঞ্জের ধলাইপার এলাকার নাম পাওয়া যায়নি। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে নির্দ্ধিধায় বাণিজ্য চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর আবার ১০ চাকার গাড়িতে অতিরিক্ত বোঝাই করে পরিবহনের কারনে ভানুগাছ-মাধবপুর এবং শ্রীমঙ্গল সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে।
ধলাই নদীর তীরবর্তী ধলাইপার গ্রামের বাসিন্দা নেকজান বিবি, কচিরা বিবি, আলিক মিয়া, মনাই মিয়া, নাজির মিয়া, পারভেজ মিয়াসহ স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা কারো কথা শুনে না। আমাদের বাড়ির সাথে নদীতে মেশিন বসিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে। ফলে নদীর এই স্থানে বড় ধরণের গর্ত তৈরি হয়েছে এবং নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পড়ছে। এমনকি বাঁধের উপর বাঁশঝাড়টিও ধ্বসে পড়েছে। এখন যে অবস্থা আমাদের বাড়িঘর ধ্বসে পড়ার অপেক্ষায়। তারা আরো বলেন, কয়েকটি ড্রেজার মেশিনের শব্দে আমরা ঘুমাতেও পারি না। সবাই অতিষ্ঠ। কেউ কিছু বললেই তারা হুমকি ধামকি দেয়। এমনকি দু’চার জনকেও শ্রমিকদের দিয়ে মারধোর করা হয়েছে।
রুজেল হাসান বক্তসহ স্থানীয় যুবনেতারা বলেন, বালু উত্তোলনকারী স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায়নি। এতোসব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের দেখানোর পরও তারা একই স্থান থেকে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিনে বালু তুলে বিশাল স্তুপ করে বাণিজ্য করছেন। এতোদিন আমরা সহ্য করেছি। এখন সরকার পরিবর্তন হওয়ায় কথা কইতে পাররাম।
অতিরিক্ত বালু বহনকারী গাড়ির কারনে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়ক বিভাগ, মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ গত ১৯ মে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত সচিত্র পত্রে বলেন, কুলাউড়া-শমশেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়কে ২২ মে.টন লোড বহন করার অনুমোদন রয়েছে। তবে বালু বহনকারী ধারণ ক্ষমতার অধিক ভারী গাড়িতে বালু মহালদারদের ৪০ থেকে ৫০ টন বালু বহনকারী ভারী ট্রাক নিয়মিত চলাচলের কারনে ফাউন্ডেশনসহ সড়ক পেভমেন্ট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আপনি নিউজ করেন। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, এখানে লিজ ছিল না, রাজনৈতিক বিষয় সম্পৃক্ত। তাদের আর বালি উত্তোলন না করার জন্য বলেছি। আর বালি উত্তোলন করবে না। যেগুলো উত্তোলন হয়েছে সেগুলো তারা নিয়ে যাবে।