জৈন্তাপুর প্রতিনিধি-
দীর্ঘ প্রায় একমাসের বেশী সময় ধরে তামাবিল স্থলবন্দর বন্ধ থাকার পর অবশেষে ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং সোমবার শুরু হলো চুনাপাথর আমদানি। এতে করে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে স্বস্তি।
গত ৫ই আগষ্ট ছাত্রজনতার গণঅদ্ভুত্থানে সরকার পতনের পর তামাবিল কয়লা, চুনাপাথর আমদানি রপ্তানি কারক ব্যবসায়ী গ্রুপের দীর্ঘদিনের নির্বাচনবিহীন কমিটিকে নানান দূর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
সে সময় ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি এম লিয়াকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেন ছেদুর নেতৃত্বাধীন কমিটির উপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিলো সাধারণ ব্যবসায়ীদের। তারা দাবী করেন সাবেক কমিটি শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি, শ্রমিক হ্যান্ডেলিং এর নামে অবৈধ চাঁদাবাজী সহ ব্যবসায়ী সংগঠন গ্রুপের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে।
৫ই আগষ্ট সরকার পতনের দিনে সাধারণ ব্যবসায়ীরা তামাবিল কয়লা চুনাপাথর আমদানি রপ্তানি কারক গ্রুপের কমিটিকে বিলুপ্ত করে অফিস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন তারা।
পরের সপ্তাহে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন ও বন্দরের আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে আমদানি জটিলতা নিরোসনের পূর্বে একটি ব্যবসায়ী কমিটির নাম আত্মপ্রকাশ করলে শুরু হয় নতুন করে জটিলতা। এর ১২ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই একে একে পাল্টা আরো দুইটি কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। এ সময় অভিযোগ উঠে সাবেক কমিটির ক্ষমতাচ্যুত নেতৃবৃন্দ কৌশলে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করছে। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার বদলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় তীব্র আলোচনা সমালোচনা।
এতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে স্থলবন্দরে ব্যবসায়ীদের ঐক্য। অনিশ্চিত হয়ে যায় পাথর আমদানি। যার ফলে ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি, পাথর সংশ্লিষ্ট মিল কারখানা শতভাগ বন্ধ সহ বেকার হয়ে পড়ে কয়েক হাজার স্থলবন্দর ও ক্রাশারমিলের পাথর শ্রমিক।
উদ্বুদ্ধ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে জরুরি বৈঠক আহবান করে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। সেই বৈঠকে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ ব্যবসায়ী হেনরী লামিনকে প্রধান সমন্বয়ক করে তামাবিলে পাথর আমাদানি স্বাভাবিক করার দায়িত্ব অর্পন করেন। পরে গত ৩রা সেপ্টেম্বর মিস্টার হেনরী লামিনের নেতৃত্বে সাধারণ ব্যবসায়ীরা মেঘালয়ের ব্যবসায়ীদের নিয়ে তামাবিল ডাউকি জিরো পয়েন্টে একটি দ্বি- পাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে পরিস্থিতি আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। অবশেষে দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের ঐক্যমতে চুনাপাথর আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ডাউকি হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তামাবিল স্থলবন্দরে দুপুর ১:১৫ মিনিটে চুনাপাথর বোঝাই ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করতে শুরু করে।
এর আগে দীর্ঘ একমাস বন্ধ থাকার পর আনুষ্ঠানিকভাবে পাথর আমদানি শুরু হওয়ার পূর্বে দুই দেশের ডাউকি তামাবিল জিরো পয়েন্টে ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মেঘালয় চুনাপাথর রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিস ডলি কংলাহ্’ র নেতৃত্বে মিস্টার লবপাতাম, মিস্টার ড্যানিয়েল কংলাহ্ সহ মেঘালয়ের ব্যবসায়ীবৃন্দ।
এ সময় তামাবিল ব্যবসায়ীদের পক্ষে হেনরী লামিনের নেতৃত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুল হাফিজ, ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী বাবলু বখত, রফিকুল ইসলাম শাহপরান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান, ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, আবদুল আহাদ, কবির আহমেদ, আবদুল আলিম,নাজিম খান,মিসবাউল আম্বিয়া, জাহিদ খান, ইসমাইল হোসেন সহ অন্যান্যরা।
এদিকে দীর্ঘ একমাসের বেশী সময় পাথর আমদানি বন্ধের পর পুনারায় শুরুতে স্বস্তি ফিরে এসেছে শ্রমিকদের মধ্য। তামাবিল পাথর কয়লা শ্রমিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে যে হতাশা ছিলো তা কেটে গেছে। আশাকরি সম্মানিত ব্যবসায়ীদের ঐক্যমতে তামাবিলে ব্যবসায়ীবান্ধব পরিবেশ বজায় থাজবে।
এ বিষয়ে তামাবিল স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আবুল হাসিম বলেন, আজ থেকে তামাবিল আওয়ামী সিন্ডিকেট দালালমুক্ত হলো। এখন থেকে তামাবিলে শুধু ব্যবসা ও ব্যাবসায়ীদের প্রধান্য দেয়া হবে। এখানে থাকবে না কোন ব্যবসায়ীক জিম্নি কিংবা চাঁদাবাজি৷তিনি আরো বলেন, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের নিকট আহবান থাকবে সকল ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা। পাশাপাশি বিগত কমিটির নেতৃত্বে যে কোটি কোটি টাকার দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতা সংগঠিত হয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বের করার পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন ও সদস্যপদ বাতিলের আহবান জানান তিনি।
তামাবিল স্থলবন্দরে চুনা পাথর আমদানি শুরু
প্রাসঙ্গিক সংবাদ