আধুনিক রিপোর্ট ::
দেশে রোববার ১২ অক্টোবর থেকে প্রথমবারের মতো টাইফয়েডের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। সরকার প্রায় পাঁচ কোটি শিশু-কিশোর-কিশোরীকে বিনা মূল্যে এই টিকা দেবে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে টিকা প্রদান করা হবে ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮০ শিশুকে এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২২ জন শিশুকে। এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফ সহযোগিতা প্রদান করছে।
বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) নগরভবন সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ উপলক্ষে যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পেইনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। জন্মসনদ নেই এমন শিশুরাও এই টিকা পাবে জানানো হয়। দেশে টাইফয়েডের টিকার এটাই প্রথম ক্যাম্পেইন। চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। টিকাটি তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। সরকার এই টিকা পেয়েছে টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক মঞ্চ গ্যাভির কাছ থেকে।
ক্যাম্পেইনের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি বা সমমান পর্যন্ত সব ছাত্র-ছাত্রীকে এক ডোজ করে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ১০ কর্মদিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তী ৮ কর্মদিবসে কমিউনিটি পর্যায়ে টিকাদান চলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে স্থায়ী ও অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হবে। এ লক্ষ্যে সিলেট জেলায় ১২টি স্থায়ী ও ২ হাজার ৪শটি অস্থায়ী এবং সিলেট নগরে ৪টি স্থায়ী এবং ৮৩২টি অস্থায়ী কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এই টিকা অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর। সরকারের এই ক্যাম্পেইন কেবল শিশুদের জীবন রক্ষা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে টাইফয়েডজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এই কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশু এবং প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি বা সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে এক ডোজ টাইফয়েডের টিকা প্রদান করা হবে। কোনো শিশুকে যেন টিকার আওতার বাইরে রাখা না হয়, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নেপাল, পাকিস্তানসহ আরও আটটি দেশে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। এই টিকার বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো উদাহরণ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, টাইফয়েড জীবাণু স্যালমোনেলা টাইফি দ্বারা সৃষ্ট একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এবং যেখানে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে, সেসব এলাকায় এই রোগের ঝুঁকি বেশি। আক্রান্ত হলে শুধু শারীরিক জটিলতাই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে টাইফয়েডজনিত মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টিকা প্রদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ইপিআই ভ্যাক্সিনেশন অ্যাপের মাধ্যমে এই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য শিশুদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না, তারাও টিকা পাবে। ভরাপেটে টিকা দেওয়া হবে, তবে শিশুর জ্বর থাকলে টিকা দেওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান, সহকারী পরিচালক ডা. মো. নূরে আলম শামীম, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন, ডা. জন্মেজয় দত্ত, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডা. মির্জা ফজলি এলাহী, ন্যাশনাল ইপিআই স্পেশালিস্ট ডা. নভোজ্যোতি দাশ, ডা. স্বপ্নীল সৌরভ রায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. খালিদ বিন লুৎফর প্রমুখ।
দেশে ২০২১ সালে ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৮ হাজার, এদের ৬৮ শতাংশ ছিল শিশু। দেশে টাইফয়েডের প্রকোপ বিষয়ে ধারাবাহিক তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যান না থাকলেও অনুমান করা হচ্ছে এটি বাড়ছে। এ ছাড়া ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপও দিন দিন বাড়ছে। দেশে টাইফয়েড সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। টাইফয়েড কমে এলে দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


