ফেরদৌস চৌধুরী রুহেল ::
ঝাড়ু ভাই ফুটবল টুর্নামেন্টের পর থেকেই লাক্কাতুরা খেলার মাঠ হয়ে ওঠে বৃহত্তর মজুমদারী, পীরমহল্লা চৌকিদেখি, ইলাশকান্দিসহ অন্যান্য এলাকার খেলোয়াড়দের সকাল-বিকালের প্রথম পছন্দ। হয়তোবা কোনো ফুটবল টুর্নামেন্ট, নয়তোবা টেপ টেনিস ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে মাঠটি। এই মাঠে বিশেষ করে চৌকিদেখি, লাক্কাতুরা এলাকার স্থানীয় খেলোয়াড়দের বিচরণ ছিল বেশি। এর মধ্যে ইলাশকান্দি উদয়ন তরুণ সংঘের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলোয়াড়রাও এই মাঠে খেলতে শুরু করেন। ১৯৯১ সালের দিকে লাক্কাতুরা এলাকার শাহাদত ও তার বন্ধুরা মিলে একটি সিমেন্টের ক্রিকেট পিচ তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে আমরা ক্রিকেট সিজনে অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করি। আমি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি এবং আমার বন্ধু ক্রীড়া সংগঠক জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আমার সাথে বারবার নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ ইমরান চৌধুরী (পরবর্তীতে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক)-আমরা দুজনে মিলে এ্যাপোলো ১২ নামের ক্লাবটি ( ক্রিকেট ও ফুটবল এবং ভলিবল) পরিচালনা করতাম। আমরাও লাক্কাতুরা মাঠকেই বেছে নিই।
এ্যাপোলো ১২ ক্লাবের ক্রিকেটের খেলোয়াড়দের বাছাই করে মজুমদারী, চৌকিদেখী, পীরমহল্লা, ইলাশকান্দি এলাকার ছেলেদের সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই মাঠে অনুশীলন হতো। এই মাঠ থেকে উঠে আসা অনেক ক্রিকেট খেলোয়াড় সিলেট যুব ক্রিকেট এবং জেলা দলে খেলেছেন। আমি যখন ১৯৯২ সালে সিলেটের স্বনামধন্য ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গল পরিচালনার দায়িত্বে, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই লাক্কাতুরা মাঠকেই আমাদের প্রতি ফুটবল সিজনে অনুশীলনের অবলম্বন করি। এবং পাশেই পীরমহল্লাহ এবং ইলাশকান্দি এলাকায় খেলোয়াড়দের আবাসিক ক্যাম্প করি। ওই সময় ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবে ঢাকা এবং সিলেটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করে দল গঠন করা হতো। এ্যাপোলো ১২ ও ইস্টবেঙ্গলের পথ ধরে সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিবন্ধিত অনেক ক্লাবের ক্রিকেট-ফুটবল অনুশীলন এই লাক্কাতুরা মাঠে হয়েছে।
ক্রীড়া সংগঠক দিলদার হোসেন সেলিম (সাবেক সংসদস্য) ভাই এর প্যানেল থেকে ১৯৯৩ সালে আমি যখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটির সদস্য হই তখন আমার দায়বোধটা যেনো আরও বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত চেষ্টা থাকতো এলাকার ছেলেদের ক্রিকেট, ফুটবল বা ভলিবলে যুক্ত করার। এক্ষেত্রে বেশ সফলও হয়েছিলাম। অনেকেই আমার ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়েছে। অনেকেই সফল হয়েছে।
তখনকার সময়ে এলাকায় পাড়াভিত্তিক ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা ছিলো। সামাজিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা, সাহিত্য-সংস্কৃতিচচার ক্ষেত্রে কে কাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে সে চেষ্টা ছিলো। বিশেষ করে বৃহত্তর মজুমদারী, পীরমহল্লা, ইলাশকান্দি, চৌকিদেখীতে এসময় গড়ে উঠতে থাকে সামাজিক সংগঠন। যেমন মজুমদারী যুব কল্যাণ সংঘ, পীরমহল্লা প্রভাতী সংঘ, ইলাশকান্দি উদয়ন তরুণ সংঘ, চৌকিদেখি রংধনু ক্রীড়া চক্র। তখনকার সময়ের স্বার্থের কোনো টান ছিল না। নিজেদের উজার করে সবাই মানুষ-সমাজকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করত। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে আবার দিলদার সেলিম ভাইয়ের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হই। তখন এ্যাপোলো ১২ এবং ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি। ফুটবল অনুশীলনের সময় সাধারণত প্রায়ই বৃষ্টি থাকত। আমরা সেটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমাদের খেলোয়াড়দের বলে দেওয়া হয়েছিল পশ্চিম দিকে টিলার নিচে যেনো একটু একটু করে তার মাটি খুঁড়ে রাখে। এর ফলে বৃষ্টির সাথে সাথে টিলার গা থেকে মাটি খসে যেত যেত যা বালু পানির সাথে পূর্ব দিকে চলে যেত। এইভাবে প্রতি মৌসুমে আমরা কৌশলে মাঠকে বড় করতে থাকি। আবার ক্রিকেটের মৌসুমে সিমেন্টের পিচের উপর টিলার মাটি সরিয়ে পিচ বের করা হতো। এইভাবেই লাক্কাতুরা মাঠকে আমরা সবাই বুকে আগলে রেখেছিলাম। (চলবে)
ফেরদৌস চৌধুরী রুহেল, ক্রীড়া সংগঠক
আরও পড়ুন


