আধুনিত ডেস্ক ::
শুক্রবার (১১ জুলাই) ইমন নামে এক ব্যক্তি পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইটে করে নেপাল যাচ্ছিলেন। বিষয়টি ইমনের মা ও তাঁর স্ত্রী জানতে পারেন এবং যাত্রা বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালান। কিন্তু তারা যাত্রা ঠেকাতে কোনোভাবেই সফল হননি। তখন ইমনেরই আরেক বন্ধু ইমরান তাদের পরামর্শ দেন, যদি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে জানানো হয় বিমানে বোমা আছে, তাহলে যাত্রাটা স্থগিত হয়ে যেতে পারে। সে অনুযায়ী, ইমনের মা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে বিমানে বোমা থাকার তথ্য জানান। আর এ নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বোমা থাকার আশঙ্কায় বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটিতে ৩ ঘণ্টার তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইটে বোমা থাকার ভুয়া খবরের এমন ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা হলেন- ইমরান, তাঁর বন্ধু ইমনের স্ত্রী তাহমিনা ও ইমনের মা রাশেদা বেগম। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বোমা আছে- ফোন করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানানো হয়। যার ফলে ওই বিমানে যাত্রা স্থগিত করা হয়। তিন থেকে চার ঘণ্টার তল্লাশি করে কিছু পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় জাতীয় এয়ারলাইন্সের ভাবমূর্তি দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে মারাত্মক ক্ষুন্ন হয়। এর আগেও এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর পরই আমরা অনুসন্ধানে নামি। সারারাত অভিযান পরিচালনা করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করেছে।
শুক্রবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমাণ্ডুর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। উড়োজাহাজটির বৈমানিক ছিলেন ক্যাপ্টেন আবদুর রহমান। ফ্লাইট ছাড়ার আগে অজ্ঞাত ফোনকলে বোমা থাকার হুমকি আসে। কলটি আসে বিকেল ৪টা ২৬ মিনিটে। এরপরই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় নেওয়া হয়। ফ্লাইটটি রানওয়ে থেকে ফিরিয়ে এনে যাত্রী নামিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। ফ্লাইটটিতে ১৪২ যাত্রী ও ৭ ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে বিমানজুড়ে তল্লাশি চালায় বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট।
উড়োজাহাজে এমন ভুয়া তথ্য দেয়াকে আইন অনুযায়ী ‘সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। র্যাব জানায়, এই ঘটনাটি শুধু পারিবারিক নয়, বরং একটি জঘন্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। র্যাব ডিজি বলেন, বিষয়টির সঙ্গে যতই আবেগ জড়িয়ে থাকুক না কেন, কোনো বোমা না থাকা সত্ত্বেও এমন তথ্য ছড়ানো দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চরমভাবে বিঘ্নিত করে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।


