আধুনিক ডেস্ক ::
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী মারা গেছেন। তিনি রাজধানীর সরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি অন্য সংক্রমণেও আক্রান্ত ছিলেন। বুধবার ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৯ জানুয়ারি তাঁর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী এইচএমপিভির পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য একটি সংক্রমণেও আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর পরিস্থিতি কিছুটা জটিল ছিল। ওই নারী কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা হলেও থাকতেন নরসিংদীতে। সেখানেই ভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি।
বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) থাকা অধ্যাপক সায়েদুর রহমান এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত যে রোগী মারা গেছেন, তিনি এক মাসের বেশি সময় ধরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বাসার কাছে স্বীকৃত চিকিৎসক নন, তাঁদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন। সেখানে ওই নারীকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। এর চার দিন পর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে ঢাকার আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তখন পরীক্ষায় তাঁর এইচএমপিভি পজিটিভ পাওয়া যায়।
সায়েদুর রহমান বলেন, আসলে এই রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন মূলত সেপসিস (রক্তের মাধ্যমে সব শরীরে সংক্রমণ) নিয়ে। তখন তাঁর কালচারে এইচএমপিভির পাশাপাশি সেখানে ক্লেভসিয়েলাজনিত সেপসিসে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসার পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে তার এইচএমপিভি পজিটিভ ডিটেকটেড হয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানে যেটুকু বলা হচ্ছে, এইচএমপিভির কারণে মৃত্যু হওয়ার ঘটনাটি বিরল। কিন্তু এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকেন, নিউমোনিয়া থাকে, ওই সব কেসে অল্প বা অনেক বেশি বয়সী মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সায়েদুর রহমান আরও বলেন, ওই রোগীর থাইরয়েড ডিজফাংশন (অকার্যকর) ছিল। সেপসিসে মাল্টি অরগান ফেইলর হয়ে তিনি মারা গেছেন। এই সেপসিস ও মাল্টি অরগান ফেইলরের রোগীদের যখন ভেন্টিলেটশনে নেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে এঁদের পরিস্থিতি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও যথেষ্ট খারাপ হয়। এই মৃত্যু মূলত ক্লেবসিয়েলার কারণে সেপসিস (ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক সংক্রমণ) এবং সেই কারণে নিউমোনিয়া এবং মাল্টি অরগান ফেইলরের কারণে মৃত্যু হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই নারী এইচএমপিভি আক্রান্ত ছিলেন। দেশে রুটিন স্ক্রিনিং হলে একটাসংখ্যক মানুষের মধ্যে এইচএমপিভি পাওয়া যাবে। স্বাভাবিকভাবে এই এইচএমপিভি কখনোই মৃত্যুর কারণ হয় না। বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত এইচএমপিভির কারণে সরাসরি মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে না। এটি মৃত্যুর হারও খুবই নগণ্য। কোথাও কোথাও হাজারে একজন বলা হয়। কিন্তু আসলে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে তা–ও না।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, গত বছর এইচএমপিভি আক্রান্ত দুজন শনাক্ত হয়েছিলেন। ভাইরাসটি দেশে ২০১৭ সালে প্রথম শনাক্ত হয়। সেই থেকে ভাইরাসটি দেশে ছিল এবং আছে। এইচএমপিভি আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি, কাশি হয়, নাক বন্ধ হয়ে যায়, শরীরে ব্যথা হয়। এটি অন্য জ্বরের মতো। তবে শিশু, বয়স্ক এবং বয়স্ক যেসব ব্যক্তি ক্যানসার বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি আছে। এই ঝুঁকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার।