বালাগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সদরের ঘোরাপুর হাওরের পাশের সরকারের লিজকৃত ঝড়ঝড়ি জলমহল সেচ করে মাছের বংশ নির্বংশ করার খবর পাওয়া গেছে। বেশ কিছুদিন থেকে প্রকাশ্য এলাকার কিছু চিহ্নিত সংঘবদ্ধ কুচক্রী মহল অবৈধ এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। পানি শুকিয়ে মাছ ধরা এবং জলমহাল সাব-লিজের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সরকারী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একটি মহল এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে একদিকে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে অপর দিকে চলতি বোরো মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সেচ কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
১০ ফেব্রুয়ারি (শনিবার ) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা সদরের নারায়নপুর মৌজার (ঝড়ঝড়ি) বিলের পাড়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কয়েকটি বড় বড় সেচ পাম্প বসিয়ে কয়েকদিন থেকে ঝড়ঝড়ি বিল প্রায় শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। বিলের পাশে প্রায় ৪০ একর জমিতে বোরো ধান রোপন করেছেন কৃষকেরা। বিল শুকিয়ে ফেলায় কৃষকের মাথায় হাত!
এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষক লকুছ মিয়া বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ বলা হয়েছে, প্রভাবশালী মহল গেল দুই বছর থেকে অদ্যাবদি বিল সেচের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যার ফলে বোরো ধানের পরিচর্যার জন্য পানি পাওয়া যায় না, এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগকারী লকুছ মিয়া প্রভাবশালীদেরকে গেল দুইবছরের ন্যায় এবারও পানি সেচ করতে বাধা দিতে গেলে মারপিট এবং হত্যার হুমকি প্রদান করেছেন স্থানীয় গহরমলি (রহমতপুর) গ্রামের বুদু মিয়া, জলিল মিয়া, আরশ আলী, ইউনুছ মিয়া।
লকুছ মিয়া বলেন, ঝড়ঝড়ি বিলের পাশে প্রায় ৪০ একর জমিতে বোরো ধান রোপন করেছেন আমার মত শত কৃষক। মাছ-পানি খেকোরা যদি সেচ কাজ বন্ধ না করে তবে অসহায় কৃষকদের ফলানো সোনালী ফসল পানির অভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। এবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এসব অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জোরালো কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় জলাশয় শুকিয়ে মাছ আহরণ ও মাছের বংশ ধ্বংস করেই যাচ্ছে এক শ্রেনীর অমৎস্যজীবি মানুষ। ফলে দেশীয় মাছের বিভিন্ন প্রজাতি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে এ জলাশয় থেকে। প্রতি বছরই জলাশয় শুকিয়ে মৎস্য আহরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। জলাশয় শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করলে একদিকে যেমন মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে আশাপাশের বোরো ফসলে পানি সেচের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। পানি শুকিয়ে মাছ ধরা এবং জলমহাল সাব-লিজের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সরকারী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একটি মহল এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ১৪৪৪ থেকে ১৪৪৯ বাংলা ৬ বছরের জন্য বালাগঞ্জ উপজেলার সবুজ বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম তুহিন সরকারীভাবে লিজ নিলেও মূলত একই উপজেলার অমৎস্যজীবি বুদু মিয়া গং নামের একদল প্রভাবশালী একটি সংঘবদ্ধ চক্র জলমহলটি ফিশিং করছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পানি সেচের বিষয়টি মাহবুব আলম তুহিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি আর ফোন রিসিভ করেন নি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক অভিযোগের বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টির দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।