ডা. সাঈদ এনাম 👨⚕️
সুচনা (ছদ্মনাম) একজন এসেছেন ডিপ্রেশন নিয়ে। তার ডিপ্রেশনের কারণ হিসেবে যা জানালেন তাতে মোটামুটি বুঝতে বাকি রইলো না তার স্বামী একজন ‘স্যাক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার’ এর পেশেন্ট।
স্বামী যে মানসিক রোগ ‘স্যাক্সুয়াল স্যাডিসম ডিসওর্ডার’ এটি সূচনা আজই প্রথম জানলেন। ‘স্যাক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার’ রোগ’টা কী সেটা সম্পর্কে তিনি সম্যক ধারণাও পেলেন। “সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার” এ আক্রান্ত রোগী ‘স্যক্সুয়াল’ অ্যাকটিভিটির পূর্বে তার পার্টনারকে বেধড়ক পেটাতে থাকে, গালি গালাজ করতে থাকে, সেই সাথে চলে তাকে নিয়ে নানান অপমানসুচক, এবং সন্দেহমুলক অসভ্য কথাবার্তা। এতে রোগী সেক্সুয়াল আনন্দ পান। এটা রোগীকে একটা পৈশাচিক আনন্দ দেয়।
যাহোক, সুচনা বিগত ১৭ বছর এসব সহ্য করতে করতে এখন আর পারছেন না। এখন তিনি এতোটাই হতাশাগ্রস্ত এবং বিরক্তও, যে তিনি স্বামীকে এবার তালাক দিবেনই। আর পারছেন না, বরং একাই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন। মাঝেমধ্যে ভাবেন সুইসাইড করতে। তাদের বিয়ের ১৭ বছর চলছে। সন্তান আছে ১টি। সন্তানকে ইংল্যান্ড নিয়ে গেছে স্যাডিস্ট বাবা। ‘স্যাডিস্ট’ সন্তানকে নিয়েছে কিন্তু ‘ওয়াইফ’কে নেয়নি, সে নিতে চায়ও না। কারন স্যাডিস্টটা প্রায়ই বলে, “তোকে ইংল্যান্ড নিলে তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি, আমার নামে বদনাম করবি”। স্যাক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার রোগে ভোগা তার স্বামী বাংলাদেশ বংশদ্ভূত বৃটিশ সিটিজেন।
সুচনা জানালেন তার গায়ে এমন কোনো জায়গা নেই যে মারা বা কাটার দাগ নেই। আর অপমান সূচক কথাবার্তাগুলো তিনি উচ্চারণই করতে পারলেন না, বলতে কাঁদতে থাকলেন। ভদ্রমহিলার সাথে আলাপে আরো বুঝা গেলো সেই স্যাডিস্ট লোকটার আবার ইরেকটাইল ডিসফাংশন যেমন আছে তেমনি আছে প্রিম্যাচ্যুর ইজাকুলেশন। মারামারি ও গালিগালাজ এর সময়ই তার অর্গাজম হয়ে যায়। অর্গাজম হলে সে কিছুটা নরম মেজাজের হতে থাকে। তবে তার ভয়ানক আচরণ নিয়ে কখনো সে অনুতপ্ত হয় না।
এখানে একটা কথা বলে রাখি সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার এর সাথে অনেক সময় এন্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারও থাকে। এতে ঘটে যায় মারাত্মক দূর্ঘটনা, হত্যাকাণ্ড। এ এক ভয়ানক পরিস্থিতি। এটা স্যাডিস্টের ছিলো ২য় বিয়ে। তার প্রথম স্ত্রী ছিলো বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত বৃটিশ সিটিজেন। সে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে বিয়ের এক বছরের মাথায়ই। আর সুচনা দ্বিতীয় বউ। সে হলো বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারের সহজ সরল অল্প বয়সী গৃহবধূ । সে ১৭ বছর মুখ বুজে সব সহ্য করে ছিলো আশায় আশায়, হয়তো লোকটা ভালো হয়ে যাবে অথবা সে লন্ডন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার আর লন্ডন যাওয়া হয়নি।
ভদ্রমহিলা ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করাতে এসে এবারই প্রথম সব তার জীবনের মর্মান্তিক কাহিনী বললেন একজন সাইকিয়াট্রিস্টকে। এর আগে তিনি মাঝেমধ্যে ফ্লুপেনটিক্সল ম্যালিট্রাসিন সেবন করছিলেন। তবে দীর্ঘদিন এটা সেবনে অনেক সময় সুইসাইডল থিংক চলে আসে।
সেক্সুয়াল সেডিজম ডিসওর্ডার সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি এবং এন্টিডিপ্রেসেন্ট বা অনেক ক্ষেত্রে এন্টিসাইকোটিক দিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান, সিলেট মেডিকেল কলেজ।
