বৃহস্পতিবার, মে ২২, ২০২৫
Google search engine
Homeশিক্ষাবিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস : সত্য ও স্বাধীনতার পথে সাহসী সাংবাদিকতা

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস : সত্য ও স্বাধীনতার পথে সাহসী সাংবাদিকতা

শাবি প্রতিনিধি:

আজ ৩ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৩ সালে এ দিবসটি ঘোষণা করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই দিনটি পালন করা হয়।

এ বছরের প্রতিপাদ্য—“সাহসী নতুন বিশ্বে রিপোর্টিং: স্বাধীন গণমাধ্যমে এআই-এর প্রভাব”—এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগে সাংবাদিকতার নতুন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।

বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা তাঁদের ভাবনা ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

দৈনিক যুগান্তরের শাবি প্রতিনিধি এবং শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জুবায়েদুল হক রবিন, বলেন, “বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ কঠিন পরীক্ষার মুখে। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল, অনেক রাষ্ট্রেই সাংবাদিকরা রয়েছেন নজরদারি, সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের ছায়ায়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর অসংখ্য সাংবাদিককে হুমকি, নির্যাতন বা কারাবন্দির শিকার হতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং ধারায় বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত তথ্যপ্রবাহের কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে সাংবাদিকদের অবস্থা ভিন্ন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সময়ে হয়রানি, হুমকি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যে সাংবাদিকতা আজ এক দুঃসাহসিক পেশা হিসেবে গণ্য হয়েছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। তথ্য সংগ্রহে বাধা, প্রশাসনের বিধিনিষেধ, ছাত্ররাজনীতির চাপ, হুমকি—এগুলোই তাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা।
তবুও আমরা আশাবাদী, নতুন প্রযুক্তি, বিকল্প মিডিয়া এবং তরুণদের উদ্যম গণমাধ্যমে নতুন ধারার সূচনা করেছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আজ আগের চেয়ে আরও সাহসী, আরও জনমুখী।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস কেবল একটি প্রতীকী উপলক্ষ নয়, বরং এটি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরার সাহসিকতার স্মারক। আমাদের প্রত্যাশা, গণমাধ্যমকে হতে হবে মুক্ত, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল। সাংবাদিকতার স্বাধীনতাই গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। আর সেই স্তম্ভকে শক্ত রাখতে আমাদের সংগ্রাম থেমে যাবে না।”

জাগো নিউজের শাবি প্রতিনিধি এবং শাবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ শুভ, বলেন, “সাংবাদিকতা হোক রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমে সাংবাদিকরা সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। তারা সৃজনশীল চিন্তা দিয়ে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা ও সংকটকে জনসমক্ষে আনেন—জনগণের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে।
সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কারণ এটি জনমত গঠন করে, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও সাংবাদিকতা এখনো পুরোপুরি স্বাধীন নয়। রাজনৈতিক প্রভাব এখনো এই পেশার বড় বাধা। সরকার বদলায়, কিন্তু গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বদলায় না।
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আমার প্রত্যাশা একটাই—সাংবাদিকতা হোক রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, হোক সত্য ও স্বাধীনতার পক্ষে, হোক জনগণের কণ্ঠস্বর।”

দৈনিক ইত্তেফাকের শাবি প্রতিনিধি এবং শাবি প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সাগর হাসান শুভ্র বলেন, “সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, যেখানে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাজে সত্য ও সুন্দর তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাদের এই নিরলস পরিশ্রম ও সাহসিকতার যথাযথ মূল্যায়নের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাপ্য সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই অপসাংবাদিকতার জন্ম হয়। তবে যারা সাংবাদিকতাকে সত্যিকারের মহান পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, তারা কখনোই অপসাংবাদিকতার চর্চা করতে পারেন না। তারা দেশ ও মাতৃকার জন্য সর্বদা দায়বদ্ধ এবং নৈতিক মূল্যবোধে অটল থাকেন।
মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সাংবাদিকতায় আকৃষ্ট করতে হলে এই পেশার সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, সাংবাদিকদের সুরক্ষা, ন্যায্য বেতন ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

স্বাধীন ও নির্ভীক সাংবাদিকতা গণমাধ্যমকে অপসাংবাদিকতা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। সমাজের দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কলমকে শাণিত রেখে সাংবাদিকরা যদি সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকেন, তবে সমাজের অনিয়মের শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব। সাংবাদিকদের এই দায়িত্বশীল ভূমিকা শুধু সমাজ নয়, বরং একটি জাতির সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।”

প্রাসঙ্গিক সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয়

Recent Comments