বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
Google search engine
Homeশীর্ষ সংবাদকুলাউড়ায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, কৃষকদের ৫ লাখ টাকার আলু তুলে নিল আওয়ামী...

কুলাউড়ায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, কৃষকদের ৫ লাখ টাকার আলু তুলে নিল আওয়ামী নেতারা

কুলাউড়া প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আদালত কর্তৃক ১৪৪ ধারা অমান্য করে একাধিক কৃষকের মালিকানাধীন জমির প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ফসল (আলু) তুলে নিল আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। ভুক্তভোগী কৃষকরা ৯৯৯ এ কল দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় কুলাউড়া থানা পুলিশের একটি দল।

শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ তুলেন, হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ফারুক আহমদ পান্না জড়িতদের মদদ দিচ্ছেন।

স্থানীয় এলাকা সূত্রে ও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামে বাড়উগাঁও মৌজায় বিভিন্ন দাগে দুই একর কৃষি জমি থেকে সাধনপুর গ্রামের কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, আব্দুল বাছিত বাচ্চু, আব্দুল গফুর, আব্দুস শহীদ, আব্দুল মন্নান, আব্দুল আজিজ, সাইফুল ইসলাম, ফয়সল মিয়া গংদের কৃষি জমি থেকে কয়েক দফায় জোরপূর্বক ফসল (আলু) তুলে নিয়ে যায় হরিচক গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান (৩৫), মৃত মুসলিম মিয়ার ছেলে দুই ছেলের মধ্যে দুই নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিস মিয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়ছর মিয়া (৪০) এর নেতৃত্বে তাদের সহযোগী সাধনপুর গ্রামের শাহিন মিয়া, আব্দুস সালাম সুরুজ, আব্দুর রশীদ, ছবদর আলী, আকমল ও ওয়াজিদ গং। এ ঘটনায় ভূমি দখলের অভিযোগ এনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কৃষক মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে ফজলুর রহমান গংয়ের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (নং- ৪৯/২০২৫) দায়ের করেন।

ওই মামলায় আদেশ দেয়া হয়, উল্লেখিত ভূমিতে ফজলুর রহমান ও কয়ছর মিয়া গং প্রবেশ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে। উভয়পক্ষকে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে কুলাউড়া থানার এসআই মো. মুহিত মিয়া ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফজলুর রহমান ও শ্রমিকলীগ নেতা কয়ছর মিয়া গং শনিবার সকালে মুহিবুর রহমান গংদের কৃষি জমিতে জোরপূর্বক লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে প্রবেশ করে কয়েক লাখ টাকার ফসল আলু তুলে নিয়ে যান। এরআগে গত ১১ মার্চ দুপুরে ফজলুর রহমান গং মুজিবুর রহমানের ছেলে লুৎফুর রহমান সুমনসহ স্থানীয় কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন কৃষক লুৎফুর রহমান সুমন। পরে তিনি ফজলুর রহমান গংয়ের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে অবাধে মাটি কাটা ও কৃষি জমি থেকে ফসল আলু তুলার বিষয়ে বাঁধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের হামলায় মুহিবুর রহমানের ছেলে মাহবুব হোসাইন (৩০) আহত হন।

সাধনপুর গ্রামের কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, লুৎফুর রহমান সুমনসহ আরো অনেক কৃষক বলেন, প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের দোসর ফজলুর রহমান ও কয়ছর মিয়া গং এর সাথে জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলছে। তারা আমাদের মৌরসী জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মনু নদীর চর এলাকায় আমাদের মৌরসী জমিতে আমরা আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি। ফসলি জমি থেকে ফসল উত্তোলনের সময় আমাদের বাঁধা দেয় প্রতিপক্ষরা। কারণ জানতে চাইলে তারা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই ঘটনায় কুলাউড়া থানা ও বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করি। পরে আদালত থেকে ১৪৪ জারি করা হলেও প্রতিপক্ষরা আমাদের ফসলি জমি থেকে প্রায় ৪০০ মণ আলু তুলে নিয়ে যায় যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা পান্না প্রতিপক্ষদের মদদ দিচ্ছেন। আমরা ফসল কাটা ও মাটি কাটার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ফারুক আহমদ পান্না বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। আসন্ন হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে, কৃষকদের জমি থেকে ফসল লুটের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যারা কৃষকদের জমি থেকে ফসল ও মাটি কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে বলেছি। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় যারা আওয়ামীলীগের দোসর থেকে বিগত সময়ে বিভিন্ন অপকর্মসহ মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হউক।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন সরকার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ঠিকাদার যদি কৃষকদের জমি থেকে ক্ষতিপূরণ ছাড়া মাটি নিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আর কৃষকের জমির মালিকানা থাকলে তাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুহিত মিয়া বলেন, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ থাকায় আদালতের নির্দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিরোধপূর্ণ জায়গায় ১৪৪ ধারার নোটিশ দুইপক্ষকে দিয়েছি। নোটিশ ভঙ্গকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। কিন্তু ওই জমি নিয়ে ফৌজধারীর বিষয়টি আমরা দেখবো। কৃষকদের জমি থেকে আলু তুলার অভিযোগ পেয়েছি, জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে এভাবে কেউ মাটি কেটে নিতে পারবে না। কৃষকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ পেলে মাটি কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয়

Recent Comments