মাঈন উদ্দিন, শাবি:
আজ ৮ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। ২০২৫ সালের এই দিনে দিবসটির ১১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এবার জাতিসংঘ দিবসটির যে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন-নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।নারী দিবস নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা রয়েছে নানা মহলে। তবে এবার জানবো নারীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশার বাণী। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন আধুনিক কাগজের শাবিপ্রবি প্রতিনিধি মাঈন উদ্দিন।
“নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হোক”
১৯৭৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে উদ্যাপিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনটি বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার আদায়ের প্রতীক।
লিঙ্গবৈষম্য দূর করে নারীর প্রতি সম্মান ও সমানাধিকারের বার্তা জানাতেই দিবসটি উদ্যাপিত হয়।আন্তর্জাতিক নারী দিবস আগে আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস নামে পরিচিত ছিল। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নারীর অধিকার, বিশেষ করে ভোটাধিকার প্রচারের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (IWD) পালিত হয় ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওয়েবসাইট অনুসারে বেগুনি, সবুজ এবং সাদা হল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের রঙ।”বেগুনি রঙ দিয়ে ন্যায়বিচার এবং মর্যাদাকে বোঝানো হয়। সবুজ আশার প্রতীক; আর সাদা বিশুদ্ধতার। পৃথিবীর অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তাইতো ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে আজ উদ্যাপিত হচ্ছে দিবসটি। নারী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা, তাদের অধিকার রক্ষা করা এবং একটি সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা।
_সুষ্মিতা ভট্টাচার্য্য মৌ,
সভাপতি তরুণ কলাম লেখক ফোরাম
শাবিপ্রবি।
“আট বছরের বাচ্চা মেয়েটিও পুরুষত্বের হিংস্রতার শিকার হয়!”
“নারী দিবস নিয়ে কিছু লিখতে গেলেও দম বন্ধ হয়ে আসে!”
নারী, যার সাথে নাড়ির বাঁধন। নারী, যার সাথে মা জড়িত! নাড়ির বাঁধন ছিন্ন করে পৃথিবীতে আসা আট বছরের বাচ্চা মেয়েটি, যে এখনো নারী হয়ে ওঠার অর্থও বোঝে না! সেই শিশুটিও যখন পুরুষত্বের হিংস্রতার শিকার হয়, তখন নারী দিবস নিয়ে কিছু লিখতে গেলেও দম বন্ধ হয়ে আসে! যে নারী আজ তার নাড়ি ছেঁড়া ছোট্ট মেয়েটার লাশ হাতে নিয়ে নিথর দাঁড়িয়ে আছে— সেই নারী কে বিশ্ব নারী দিবসের শুভেচ্ছা! নারী মানে কি শুধুই ত্যাগস্বীকার?
তবে এই একটাই চাওয়া— যেন আর কোনো নারীকে এ ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে না হয়! বিশ্ব নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
_রাহাতুল জান্নাত
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি।
“আধুনিকতার নামে নারীদের কলঙ্কিত করছে”
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মধ্যে ভয় ও অধিকার হারানোর শঙ্কা থাকে। কিন্তু এই শঙ্কা কি থেমে আছে —থেমে নেই। চারদিকে নারীদের অবমূল্যায়নই যেন আধুনিকতার নামে নারীদের কলঙ্কিত করছে। চারদিকে নারী- শিশু- ধর্ষণ , হত্যা, নির্যাতন ও অবলীলায় নারীদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ আচরণ যেন নিত্যদিনের ভোগান্তিতে নারীদের পথ রুদ্ধ করছে। “বিশ্বে যা- কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘নারী’ কবিতার সেই নারীদেরকে আমরা মূল্যায়ন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। আমাদের দেশ তথাপি বিশ্বের কোন প্রান্তে যেন এই রকম শিশু ধর্ষণ না হয়, নারী ধর্ষণ না হয়, নারী-শিশুদের -হত্যা,নির্যাতন না হয়, সর্বোপরি নারীদের বাঁচার অধিকার নিশ্চিত হয়। নারীরাও যেন বলতে পারে – আমরা অধিকার পেয়েছি- সমাজে নির্ভয়ে চলার অধিকার, বাঁচার অধিকার। নারীদের সেই করুণ আর্তনাদ ও সমাজে শোষিত, ঘৃণ্য চিৎকার না আসাটাই নারীদের সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বাচাঁর অধিকার।
_মোঃ আসাদুল হক আসাদ
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি।
“বৈষম্যহীন হউক নারীর পথ”
প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যে ভরা আমাদের এই ভূখন্ড। এই ভূখন্ডে সংগ্রাম, ঐতিহ্যে সকল ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নারীরা ছিলো সম্মুখ যোদ্ধা। মুক্তির সংগ্রামে তারা ছিলো অগ্রগামী।বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তারা ছিলো অকুতোভয় যোদ্ধা।সকল অন্যায়,বৈষম্যের বিরুদ্ধে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে গেছে অবিরাম। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে সবখানেই আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়েছে নারীর ভূমিকা।তবে পুরোপুরি সুগম হয়নি নারীর পথ।পুরুষশাষিত একটা নারীকে এখনো দেখছে অবহেলা,অবজ্ঞার চোখে।
মূলত নারী দিবস হচ্ছে জাতি,গোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিকসহ সবক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেওয়ার দিন।
_আশিকুর রহমান আশিক
বাংলা বিভাগ, শাবিপ্রবি।