শুক্রবার, মে ১৬, ২০২৫
Google search engine
Homeশীর্ষ সংবাদশান্তিগঞ্জে ফিল্মি স্টাইলে ভয়ঙ্কর ডাকাতি!

শান্তিগঞ্জে ফিল্মি স্টাইলে ভয়ঙ্কর ডাকাতি!

◼️প্রহরীকে বেঁধেছে তার পরনের লুঙ্গি দিয়ে
◼️ একটি দোকানের মালামাসহ ৪ সিএনজি ছিনতাই
◼️ভয়-আতঙ্কে ব্যবসায়ী-পরিবন শ্রমিক ও এলাকাবাসী

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ফিল্মি স্টাইলে ভয়ঙ্কর ডাকাতি করেছে একদল ডাকাত! ভোর রাতে প্রহরীকে তার লুঙ্গি দিয়ে হাত, মুখ ও চোখ বেঁধে ডাকাতি করেছে ডাকাত দল।

এসময় ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে ৪টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও একটি মুদির দোকানে ডাকাতি করেছে তারা। উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও পয়েন্ট থেকে তিনটি ও বীরগাঁও এলাকা থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে যায় ডাকাতেরা। মুদির দোকানটিও একই পয়েন্টের। শুক্রবার ভোর রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ভয়-আতঙ্কে এলাকার ব্যবসায়ী-পরিবণ শ্রমিক ও জনসাধারণ।

সিএনজি অটো রিকশার মালিকেরা হলেন- উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের মৃত আলীম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ আহমদ। তার গাড়ি নং- সুনামগঞ্জ থ ১১-৩৯০২। অপরজন হচ্ছেন- একই গ্রামের হানিফ উল্লাহ’র আবদুল খালিক। গাড়ির নং- সুনামগঞ্জ থ ১১-৩১৮৮। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের চন্দপুর গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে রুহুল আমীনের গাড়ি চালাতেন শিপন আহমদ। তাদের এই গাড়িটিও নিয়েছে ডাকাতেরা। গাড়ি নং সুনামগঞ্জ থ ১১-৪৪২। পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের আব্দুল মান্নানের ছেলে আমিনুল হকের একটি সিএনজি (সুনামগঞ্জ থ ১১-১৪৮২) নিয়েছে ডাকাতেরা। মুদির দোকানের মালিক ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আল আমীন।

পশ্চিমপাড়া ব্রাহ্মণগাঁও পয়েন্টের নৈশ প্রহরী ষাটোর্ধ্ব আফতর আলী জানান, রাত আনুমানিক ৪টার দিকে তার দায়িত্বরত এলাকার পয়েন্টে বসে মোবাইল ফোনে ওয়াজ শোনছিলেন তিনি। হঠাৎ করে রথপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে চারজন যুবক এসে তাঁকে অতর্কিত আক্রমণ করে বসে। গলার মাঝে চুরি ধরে চেঁচামেছি করতে নিষেধ করে। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা আমার পরনের লুঙ্গি খোলে আমার হাত, মুখ ও চোখ বেঁধে অনেক দূরে একটি ট্রাকের নিচে ফেলে রাখে। পরে তারা কী করেছে বা কি নিয়েছে আমি আর বলতে পারিনি। তাদের আচরণ দেখে মনে করেছি, ডাকাতেরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমি প্রায় দুই ঘন্টা এভাবে বাঁধা ছিলাম।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতও ব্রাহ্মণগাঁও পয়েন্টের দু’টি গ্যারেজে তিনটি সিএনজি রেখেছিলেন চালকেরা। এখান থেকে তিনটি সিএনটি চালিত অটোরিকশা নিয়ে যায় ডাকাতেরা। এসময় আল-আমীনের মুদির দোকন থেকেও নগদ টাকা, সিগারেটের কার্টুন ও বিস্কুট মাল নিয়ে যায় তারা। এদিকে, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন থেকেও একটি সিএনজি নিয়ে যায় ডাকাতেরা।
সিএনজি হারিয়ে পাগল প্রায় ফরিদ আহমদের বিধবা মা দয়া বেগম। বিলাপ করে কাঁদছেন তিনি। তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। দয়া বেগম বলেন, কিস্তির মাধ্যমে ছেলেকে সিএনজিটি কিনে দিয়েছিলাম। এখনো অর্ধেক কিস্তিও পরিশোধ করতে পারিনি। আমার সংসার চালানোর একমাত্র মাধ্যম ছিলো এই সিএনজির আয় উপার্জন। এখন আমাকে পথে বসতে হবে। কীভাবে কিস্তি চালাবো, কীভাবে সংসার আর ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকবো তা ভেবেই কুলকিনারা পাচ্ছি না। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবদুল খালিকের বৃদ্ধ বাবা হানিফ উল্লাহ্ বলেন, আমার ছেলে একজন আমড়া বিক্রেতা ছিলো। বাসস্ট্যান্ডে গাড়িতে ফেরি করে নারকেল ভাজা ও বরিশালের আমড়া বিক্রি করে টাকা জমিয়ে একটি সিএনজি কিনেছিলো সে। ভালোই চলছিলো। এখন আমাদের আর কিছুই রইলো না। জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদটি নিয়ে গেছে ডাকাত দল। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি একটাই, যেভাবেই হোক দ্রুত আমাদের সিএনজি খোঁজে বের করে আমাদের ফিরেয়ে দেবে এবং ডাকাতদের দ্রুত গ্রেফতারেরও দাবি করছি।

পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হায়দার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের শান্ত্বনা দিয়েছি। নৈশ প্রহরীকে দেখেছি। প্রশাসনের কাছে দাবি করছি, ডাকাতদের দ্রত খুঁজে বের করে গরীব লোকগুলোর সিএনজি যেনো উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্থানীয় ব্যক্তি সজীব আহমদ, শুকুর আলী ও পরিবহণ শ্রমিক গফুর আলীসহ এলাকাবাসী। তাঁরা বলেন, পরিবহণ শ্রমিকরা পয়েন্টে গাড়ি রেখে এতাদিন রাতে নির্বিঘ্নে বাড়িতে ঘুমিয়েছে। এখন উদ্বেগ বেড়ে গেলো। পাশাপাশি এই ঘটনার পর থেকে ব্যবসায়ীরাও সব সময় আশঙ্কায় থাকবেন। রাতবিরাতে সাধারণ মানুষজনও রাস্তায় চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। এই পরিস্থিতি থেকে আমরা দ্রুত উত্তরণ চাই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোড়ালো দাবি জানাচ্ছি।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী বলেন, আমাদের কাছে এখনো এই বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেন নি। তবে সোর্স মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা আমাদের ফোর্স পাঠিয়েছি। খবর নিয়েছি। তারা যদি আমাদের অভিযোগ করেন তাহলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয়

Recent Comments