এম কে তুহিন
ঈদের ছুটি শেষে নগরীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু ঠিক উল্টো চিত্র দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের। ক্লাস শুরু তো হয়ইনি, কবে শুরু হবে সেটাও কেউ বলতে পারছেন না। পাহাড়ি ঢল এবং অতিবৃষ্টির কারণে নগরীসহ পুরো সিলেট বিভাগে দেখা দেওয়া বন্যার কারণে প্রায় এক মাস ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে এ কলেজ। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা কীভাবে কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকি এই কলেজে ডিগ্রি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল কিন্তু পানির কারণে ডিগ্রি পরীক্ষা অন্য কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে।
দুই দফা বন্যার ধকল পেরিয়ে সিলেট এখন তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি। সিলেট নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সময়ে সময়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দক্ষিণ সুরমা কলেজের পানি ফটক ছেড়ে যায়নি। তিন জুন থেকে পানির মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণ সুরমা কলেজ। এতদিন ফটক পর্যন্ত পানি আটকে থাকলেও সোমবারের বৃষ্টিতে কলেজ ক্যাম্পাসও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই বন্যার কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কলেজে ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সামনে পরীক্ষা তাই অফিস কার্যক্রম চালিয়ে যেতেই হচ্ছে। কলেজের শিক্ষক ও অফিস কর্মচারীরা নোংরা পানিকে সঙ্গী করেই অফিস করছেন।
শিক্ষার্থীদেরও যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না তা নয়। প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এই পানি ডিঙিয়েই কলেজে আসতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে মেয়ে পরীক্ষার্থীদের। কলেজের প্রধান ফটক থেকে রিকশায় করে ভেতরে যেতে হচেছ তাদের। জরুরি কাজে কলেজে আসা শিক্ষার্থীরাও হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সামনেই পরীক্ষা কিন্তু এই পানির মধ্যে সিট বণ্টন নিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজে সুযোগ পেয়েছেন তারা নিজের কলেজ ক্যাম্পাস দেখতে এসেও পানি ছাড়া আর কিছুই দেখার পাচ্ছে না।
কলেজে ফরম জমা দিতে আসা শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, গকত কয়েকদিন ধরে কলেজে ক্যাম্পাস পানিতে নিমজ্জিত। যাওয়া আসাতে অনেক কষ্ট।
এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে আসা শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, আজকে আমি এইচএসসি পরীক্ষার এডমিটকার্ড নিতে কলেজে আসছি। এটা খুবই বাজে অবস্থা। এই পানিতে পায়ের অনেক সমস্যা হতে পারে। আরেক পরীক্ষার্থী ইমন বলেন, আমাদের জন্য খুব দুর্ভোগের ব্যাপার। কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রয়োজন থাকায় বাধ্য হয়েই সকলকে নোংরা পানি ডিঙিয়ে কলেজে প্রবেশ করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত বালু উচু করে দিয়ে যাতায়াতের সুবিধা করে দেওয়া।
কলেজের দর্শন বিভগের প্রভাষক মো. মুহিবুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে কলেজের রাস্তা, আঙ্গিনা এমনকি ক্লাসরুম পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে আছে। পানিবন্দি থাকায় কলেজেব বিভিন্ন পরীক্ষা নিতে অনেক বিঘ্ন ঘটছে। আমাদের কলেজ ২৩ জুন খোলার কথা ছিলো কিন্তু রাস্তা পানির নিচে থাকার কারণে এরই মাঝে পাঠদান কার্যক্রম দুইবার পেছানো হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হচ্ছে। আমরা আশা করি প্রশাসন ও দায়িত্বশীল যারা আছেন তারা ভূমিকা রাখবেন। আগামী ৯ জুলাই থেকে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়াটাও অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. মতিউর রহমান বলেন, বন্যার কারণে আমরা ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তারপর পরিস্থিতির উন্নতি হলে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করবো না হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখবো।
২০২২ সাল থেকে কলেজটি বন্যার মুখে পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার দুইদফা বন্যা কবলিত হওয়ায় আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ক্লাস করতে পাচ্ছে না এবং পরীক্ষাও বিঘ্নিত হচ্ছে। একটি পরীক্ষা অন্যত্র নেওয়া হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট বণ্টনেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে পরীক্ষা নেওয়া এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস কার্যক্রমের সমস্যা সহজে সমাধান হবে বলে মনে হয় না। তবে ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আমরা অফিস করছি নিয়মিত। ২ থেকে ৩ ফিট পানি অতিক্রম করেও আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। যদি বন্যা পরিস্থিতি এভাবে থাকে তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাবো এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য যে নির্দেশনা থাকবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।