আধুনিক ডেস্ক
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর এলাকা থেকে পাথর লুট চলছেই। প্রতিদিন অনন্ত ১৫০ থেকে ২০০ বারকি নৌকা দিয়ে পাথর লুট করে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এতে মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটটি। পাথর লুট করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে অনেকে। তবুও তাণ্ডব থামছে না পাথর খেকোদের। এদিকে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করেও ব্যর্থ হচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
পাথর লুটের অভিযোগে বুধবার ১৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতকনামা আরো ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শিপলু কুমার দে। এরপরও কোনোভাবে পাথর লুটপাটদেরকারীদের থামানো যাচ্ছে না।
এদিকে রাতের আঁধারে পাথর লুটের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পাথর খেকোদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান পরিচালনা করছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ।
নির্বাহী কর্মকর্তার এই অভিযানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি চক্র।
অভিযোগ এই চক্রটি ও সাধারণ শ্রমিকদেরকে নিয়ে বারকি বাঁচাও আন্দোলনের নাম দিয়ে নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য ইউএনও এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও প্রকাশ্যে ইউএনকে লাঞ্চিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তৃণমূল বিএনপি নেতা আবুল হোসেন।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাথরবাহী বারকি নৌকা ডুবানোর একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফাসানোর অভিযোগ উঠেছে। রোববার কোম্পানীগঞ্জের ধলাই সেতুর পূর্বপাড়ে বারকি বাঁচাও আন্দোলনের ডাকে শ্রমিক সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের উপর অমনাবিক নির্যাতনের বিচার ও ভোলাগঞ্জ, জাফলং ও বিছনাকান্দি সহ সিলেটের পাথরকোয়ারী খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। জানা যায়, সাদা পাথর লুটের অভিযোগে মামলা দায়েরের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিতর্কিত করতে রাবকি বাঁচাও আন্দোলনের নামে নাটক সাজাচ্ছে ঐ চক্রটি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ৩০ মে বেলা ২টার দিকে বন্যাদূর্ঘত এলাকা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসময় পাথর ভর্তি একটি বারকি নৌকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বহনকারী নৌকার সামনে পড়ে যায়। এসময় পাথর লুটকারীদের ধরার চেষ্টা করলে তারা নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পানিতে পড়ে যায়। এই ভিডিওটিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে একটি চক্র ইউএনও’র বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে ।
তৃণমূল বিএনপি নেতা অভিযুক্ত আবুল হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই বন্যার সময় যেখানে মানবিক হওয়ার কথা পক্ষান্তরে তিনি তিনটি বারকি নৌকা ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়ে দেন। তিনি ১৭ জনের বিরুদ্ধে পাথর চুরির মামলা দায়ের করেন। এই অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবি ৩০০ বছরের ঐতিহ্য বারকি পেশা।
এই পেশার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। এই অধিকার হনন করা হয়েছে। দরবেশ বারা চক্র মিলিয়া পরিবেশের দোহাই দিয়ে সরকারকে বুঝিয়ে এই ব্যবসা বন্ধ করা হয়েছে। আমরা চাই সনাতন পদ্ধতিতে এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অভিযান ও মামলার বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। একটি সিন্ডিকেট পাথর শ্রমিকদের নিয়ে এ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এ সিন্ডিকেটের মধ্যে পাথর লুটকারী, চোরাকারবারী, পাথর বিক্রয়কারী ও চোরাই পাথর সরবরাহকারীরা রয়েছেন। মামলার আসামিরাও আন্দোলনে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশনা পালন করে যাবো। পাথর লুটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
একটি মামলা দায়ে করা হয়েছে, এটি এখন আদালতে রয়েছে। আদালত যে আদেশ দেবেন সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। এসব ভিত্তিহীন আন্দোলন প্রশাসনের কোনো কাজে প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, রোববার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জে ধরাই নদীর সেতৃর পূর্বপাড়ে বারকি বাঁচাও আন্দোলনের ডাকে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠি হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও কর্তৃক বারকি শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের বিচার, নিরীহ সকল পাথর কোয়ারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বারকি বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক শ্রমিক নেতা ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও রফিকুল ইসলাম রাঙ্গার পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল বিএনপি নেতা আবুল হোসেন।