আধুনিক রিপোর্ট ::
১১ বছর পর আবারও এভারেস্ট চূড়ায় ওড়লো বাংলাদেশের পতাকা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন চট্টগ্রামের বাবর আলী। রোববার ১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় তিনি চূড়ায় পৌঁছান। বাবরের সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ থেকে রোববার সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। বাবর আলীর এভারেস্ট জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান আধুনিক কাগজকে জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ক্যাম্প-৪ এ নেমে বিশ্রামে যান বাবর আলী।
এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন নিয়ে গত ১ এপ্রিল বাবর আলী বাংলাদেশ থেকে নেপালের উদ্দেশে রওনা হন। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান লুকলা বিমানবন্দরে। এরপর পথচলা শুরু করেন এভারেস্ট বেজক্যাম্পের উদ্দেশে। ১০ এপ্রিল সেখানে পৌঁছান। এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ জন্য একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করতে হয়েছে বাবরকে। ২৬ এপ্রিল বেজক্যাম্প থেকে এভারেস্টের ক্যাম্প ২ পর্যন্ত ঘুরে এসে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব সমাপ্ত করেন। এরপর অনুকূল আবহাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় বাবরকে। ১৪ মে মাঝরাতে বেজক্যাম্প থেকে বাবরের যাত্রা শুরু হয় চূড়া অভিমুখে। প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে যান ক্যাম্প ২-এ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর ১৮ মে উঠে যান ক্যাম্প ৩ এবং ১৯ মে পৌঁছান ক্যাম্প ৪-এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ‘ডেথ জোন।১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা। ১৯ মে ভোরের প্রথম আলোয় ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট এভারেস্টে প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় ১শ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে। তবে সফলতা আসে৭১ বছর আগে। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগেকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী এডমন্ড হিলারি। আর প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে ২০১০ সালের ২৩ মে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠেন মুসা ইব্রাহীম। এরপর ২০১১ ও ২০১২ সালে দুবার এভারস্ট জয় করেন এম এ মুহিত। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন নিশাত মজুমদার। একই মাসের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট।
বাংলাদেশের এভারেস্ট জয়ের গল্পে আছে করুণ কাহিনীও। ২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্টজয়ী পঞ্চম বাংলাদেশি সজল খালেদ এভারেস্টচূড়া থেকে নেমে আসার সময় মারা যান।এরপর আর ১১ বছর ধরে কোনো বাংলাদেশির পা পড়েনি এভারেস্টের চূড়ায়।১১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটালেন ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী।
অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় বাবর আলী পেশায় চিকিৎসক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসা পেশা শুরু করলেও থিতু হননি। ডাক্তারি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরা শুরু করেন। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন বাবর আলী। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থেমেছিলেন তিনি। পথে যেতে যেতে ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। এর আগে ২০১৯ সালে পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা হেঁটে পার করেন তিনি। এসব অভিযান নিয়ে লিখেছেন বই।
বাবর আলীর সাফল্যে অভিভূত তার টিমের সদস্যরাও। অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরে জানান, বেসক্যাম্পে ফিরে না আসা পর্যন্ত তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।
বাবর আলীর সাফল্যে অভিভূত তার টিমের সদস্যরাও। অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরে জানান, বেসক্যাম্পে ফিরে না আসা পর্যন্ত তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।
এভারেস্ট জয় করেই থামছেন না বাবর আলী। এর সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও জয় করতে চান তিনি। ক্যাম্প ৪–এ নামার পরই শুরু হবে দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা।
১১ বছর পর এভারেস্টের চূড়ায় আবার বাংলাদেশের পতাকা
প্রাসঙ্গিক সংবাদ