আহমেদ সবুজ:
সিলেট নগরীর ফুটপাত হকারমুক্ত। এখন স্বস্তিতেই ফুটপাতে হাটা চলাফেরা করতে পারেন নগরবাসী।
বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, কোর্ট পয়েন্ট, পোস্ট অফিসের সামনে কোথাও নেই হকার।
হকারমুক্ত নগরী গড়তে সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের উদ্যোগে গত ১০ মার্চ (রবিবার) লালদিঘীপাড়ে অস্থায়ী মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসন করা হয়।
প্রায় সাড়ে ৪ একর জায়গায় প্রায় আড়াই হাজার হকারের পুনর্বাসন ব্যাবস্থা করা হয় লালদিঘীর পার মাঠে।
পর্যায়ক্রমে সব হকারকে লালদিঘী মাঠে নিয়ে আসার পাশাপাশি তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা পূরণের আশ্বাস দেন তিনি।
মেয়রের ডাকে সাড়া দিয়ে লালদিঘী মাঠে এলেও কেউবা হতাশায় ভুগছেন আবার কেউবা দেখছেন আশার আলো।
শনিবার বিকেলে নগরির লালদিঘীর পার মাঠে ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা হয়। এসময় ব্যাবসায়ীরা প্রধান দুটি সমস্যা কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন এখানে খোলা ড্রেনের দুর্গন্ধের কারণে অনেকেই আসতে চায়না। তাছাড়া রাস্তার সমস্যা মার্কেটের সবচেয়ে বড় সমস্যার একটি।
রাস্তা ও ড্রেনের দুর্গন্ধের সমস্যা তুলে ধরে এক জুতা দোকানের ব্যাবসায়ী বলেন, এখানে রাস্তা কোথায়? বৃষ্টি হলে সারা শহরের ময়লা এসে এখানে জমা হয়। খোলা ড্রেনের গন্ধে কেউ দাড়াতে পারেনা। এছাড়াও কয়েকদিন আগে এক বৃষ্টিতে প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। বৃষ্টিতে প্রচুর মাল-পত্র নষ্ট হয়ে যায়।
ঐ দোকানী বলেন, সিটি মার্কের ভেতরের রাস্তা ৯ হাত কিন্তু দোকানীরা রাস্তার উপর দোকান তুলে রাস্তাকে করে ফেলছে ৩ হাত। একটি রিকশা ঠিকমতো আসতে পারেনা এই রাস্তা দিয়ে। তাছাড়া লালদিঘীর পার ব্যাংকের ঐদিকের রাস্তায় একটা ট্রাক ঢুকলেই রাস্তা বন্ধ।
হতাশা জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, দেড় লাখ টাকার মাল তুলে এখনো ২০০ টাকা বিক্রি করতে পারিনি।
কাপড়ের দোকানের এক ব্যাবসায়ী বলেন, কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা নাই বললেই চলে।
তিনি বলেন, সকাল ১২টায় দোকান খুলে বসেছি এখনো একটা টাকাও বিক্রি হয়নি। গতকালও (শুক্রবার) কোন বেচাকেনা হয়নি। এমন চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
আরেক কাপড় ব্যাবসায়ী বলেন, একশ টাকা বাসা থেকে নিয়ে আসি, রিকশা ভাড়া ৬০ টাকা দিয়ে এখন ৪০ টাকা আছে পকেটে, এখন ইফতারি যে করবো এখানে বসে ইফতারির টাকাও নেই।
তিনি বলেন, এক লাখ টাকা খরচ করে বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি করে ছিলাম কিন্তু সেই ঘরও তুফানে উড়ে গেছে।
ঐ ব্যাবসায়ী আরো বলেন, আমাদের মূলধন হচ্ছে ৫-১০ হাজার টাকা আর এখানে ব্যাবসা করতে হলে দুই লাখ টাকার প্রয়োজন। দুই লাখ টাকা কি হকারের কাছে আছে?
এছাড়াও এই মার্কেটের বেশিরভাগ ব্যাবসায়ী ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিওর ঋণে জর্জরিত। কিভাবে তারা লোন পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় মাথায় হাত তাদের।
তবে ভিন্ন চিত্র কাঁচা বাজার ও মাছ বাজারে। সেখানে গিয়ে প্রচুর ক্রেতা সমাগম দেখা যায়।
তবে তাদের প্রত্যাশা রাস্তা বের হলে ক্রেতা আরো বাড়বে।
কাঁচা বাজারের এক তরকারি ব্যাবসায়ী রাস্তার কারণে অনেকেই পর্যাপ্ত তরকারি বা জিনিসপত্র কিনে নিতে পারেন না। কারণ এখানে রাস্তা দিয়ে একটা সিএনজি বা রিকশা ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারেনা।
তবে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, কাপড়ের দোকানিদের চেয়ে আমাদের অবস্থা ভালো।
একজন ফল বিক্রেতা বলেন, শুধুমাত্র রাস্তার কারণে একদিনের ফল ৪ দিনে বিক্রি করতে হয়। যদি রাস্তা বের হয়ে যায় তাহলে আমাদের বেচাকেনা ইনশাআল্লাহ ভালো হবে।
মেয়েরের উপর আস্থা রেখে লালদীঘির মাঠে স্থায়ী ব্যাবসা শুরু করেন এবং সিটি করপোরেশন হকারদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয় তাহলে অচিরেই আমরা সুন্দর একটা সিলেট সিটি দেখতে পাবো।
তবে শুধু সিটি করপোরেশন একার প্রচেষ্ঠা নয়, নগরবাসীর এগিয়ে আসা উচিত। সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দবাজারের লালদিঘী মার্কেট থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি কাপড়-চোপড়, জুতা ইত্যাদি ক্রয় করলে তাদের ব্যাবসা যেমন জমে উঠবে সাথে একটা পরিবারের আয়ের ভীত মজবুত হবে।