ডেস্ক রিপোর্ট:
সিলেটের মেয়ে ছালেহা বেগম তখন ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস স্কুলের ছাত্রী। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া এবং স্কুলে কালো পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ছালেহা বেগম। এই মহান ভাষা সৈনিককে রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার ময়মনসিংহে এক আলোচনা সভায় ভাষা সৈনিক ছালেহা বেগমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। নগরীর চেতনা সংসদ কার্যালয়ে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ এ সভার আয়োজন করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক জিয়া উদ্দিন আহমেদ, কাজী আজাদ জাহান শামীম, আইনজীবী শিব্বির আহাম্মেদ লিটন, প্রয়াত ভাষা সৈনিক ছালেহা বেগমের ছেলে লেখক, গবেষক ও সংগীত শিল্পী সৈয়দ শাকিল আহাদ, আইনজীবী সৈয়দা ফরিদা আক্তার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রয়াত ছালেহা বেগম ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া এবং স্কুলে কালো পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। সে বহিষ্কারাদেশ আজও বহাল। এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য মুসলিম গার্লস স্কুলের বর্তমান কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানানো হয়।
বক্তারা আরও বলেন, ‘এই মহান ভাষা সৈনিকের পরিবারকে ভাষা সৈনিকের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আাদায়ের জন্য নতুন করে আন্দোলন করতে হচ্ছে, যা বেদনাদায়ক এবং জাতির জন্য লজ্জা। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও একজন দেশপ্রেমিকের সম্মানের স্বীকৃতি জানাতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। এই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে হবে আমাদের।’ সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি স্বাধীন চৌধুরী।
ছালেহা বেগমের পৈত্রিক নিবাস মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার উছলাপাড়া গ্রামে। বাবা আবুুল মোজাফফর আশরাফ আলী ছিলেন সাব রেজিস্ট্রার। ছালেহা বেগমের বড় বোন রওশন আরা বাচ্চু ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন। অপর বোন হোসনে আরা বেগম নেতৃত্ব দেন পিরোজপুরে। ময়মনসিংহ গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রীদের সংগঠিত করার মূল কুশীলব ছিলেন ছালেহা বেগম। ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি করার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কালো পতাকা নিয়ে মিছিলের সামনে ছিলেন ছালেহা বেগম। ময়মনসিংহের তখনকার জেলা প্রশাসক ডি কে পাওয়ার মিছিলের সংবাদে বিচলিত হন। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার ‘অপরাধে’ তিন বছরের জন্য স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয় ছালেহা বেগমকে। থেমে যায় মেধাবী এ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা। পড়ালেখার পাট চুকিয়ে সংসারী হতে হয় তাকে।