বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
Google search engine
Homeজাতীয়বঙ্গবীর ওসমানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী : কেউ ভোলে না, কেউ ভোলে

বঙ্গবীর ওসমানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী : কেউ ভোলে না, কেউ ভোলে

আহমেদ সবুজ
তার নামে রাজধানীতে স্মৃতি মিলনায়তন রয়েছে অথচ তাকে স্মৃতিতে ধরে রাখার প্রয়াস নেই। নীরবেই চলে যায় তার জন্ম ও মৃত্যুদিবস। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। পরিবার ও সুহৃদ ছাড়া আর কারও পক্ষ থেকে দিবসটি উপলক্ষ্যে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। অথচ বাংলাদেশের নাম যতদিন থাকবে ততদিন ওসমানীা নামটি প্রাসঙ্গিক। ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা থাকবে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে।

এমএজি ওসমানী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৎসময় দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ কলকাতা থেকে প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভাষণে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধে নের্তৃত্বে অসামান্য প্রজ্ঞার পরিচয় দেন ওসমানী। যুদ্ধ চলাকালে প্রদর্শন করেন অভূতপূর্ব সমরকৌশল। তাঁর মেধা ও সামরিক যুদ্ধ কৌশলে পরিচালিত হয় মুজিবনগর সরকারে যুদ্ধ পরিকল্পনা। মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে মুক্তিপাগল মানুষকে নিয়ে পৌঁছেন বিজয়ের বন্দরে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান, রাজনীতিবিদ জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর জন্ম ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর পিতার কর্মস্থল সুনামগঞ্জে। তার পৈত্রিক নিবাস সিলেটের ওসমানীনগরের (ওসমানীর মৃত্যুর পর তার নামে গঠিত উপজেলা যা এর আগে বালাগঞ্জের অন্তর্গত ছিলো) দয়ামীরে। তার পিতা বাবা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মাতা জোবেদা খাতুন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় আসামের গৌহাটিতে (বর্তমানে গুয়াহাটি)। ১৯২৩ সালে ‘কটনস্ স্কুল অব আসামে -এ ভর্তি হন তিনি। ১৯৩২ সালে ওসমানী সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এ ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ওসমানী ১৯৩৮ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর শুরু হয় তারা সেনাজীবন। ১৯৩৯ সালে তিনি রয়্যাল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে কমিশনড অফিসার হিসেবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এ সময় একটি ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নেন তিনি। ১৯৪১ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। পরের বছরই উন্নীত হন মেজর পদে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি বার্মা রণাঙ্গনে ব্রিটিশ বাহিনীর অধিনায়করূপে যুদ্ধ করেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৮ ১৯৪৯ সালে ওসমানীকে সেনাবাহিনীর চিফ অব দি জেনারেল স্টাফের সহকারি নিয়োগ করা হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ওসমানী চতুর্দশ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের নবম ব্যাটালিয়নে রাইফেল কোম্পানির পরিচালক, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের অতিরিক্ত কম্যান্ডান্ট এবং সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন। এরপর তিনি আর্মি হেডকোয়ার্টারে জেনারেল স্টাফ ও মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে কর্নেল হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন ওসমাী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন তিনি। ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরে বাকশাল গঠনের প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালে সংসদ সদস্য পদ ও আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। তবে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মো. মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা) ঘটনার পর ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন জেনারেল ওসমানী। ১৯৭৬ সালে জাতীয় জনতা পার্টি নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ওসমানী। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে মৃত্যু হয় চিরকুমার ওসমানীর।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয়

Recent Comments