ডেস্ক রিপোর্ট ::
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা–পুলিশের কাছে খবর যায় উপজেলার কাপাপাশা গ্রামের সেতুর নিচে অজ্ঞাতনামা এক শিশুর মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) পুলিশ বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে। হবিগঞ্জ কবরস্থানে শিশুটিকে দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।
শিশুর লাশ উদ্ধার নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ইয়াসমিন বেগম নামের এক নারী ১ ফেব্রুয়ারি রাতে বানিয়াচং থানায় আসেন। তিনি শিশুটিকে তার সন্তান হিসেবে শনাক্ত করেন। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলা করেন ওই নারী। শিশুটিকে ট্রাক থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যার অভিযোগে ওই মামলায় শিশুটির বাবা ইমরান আহমেদকে আসামি করেন জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দান গ্রামের ইয়াসমিন বেগম।
ইয়াসমিন বেগমের ভাষ্য, জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাট এলাকার বাসিন্দা ট্রাকচালক ইমরান আহমদের সাথে তিন বছর আগে তার বিয়ে হয়। ইয়াসমিনের আগের স্বামীর সংসারে তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। এদিকে ইমরানের সঙ্গে বিয়ের পর ইয়াসমিনের এক মেয়ে হয়, যার নাম রাখা হয় অ্যানি (১৫ মাস)। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দিত প্রায় সময়ই। একপর্যায়ে কয়েক মাস আগে ইমরান তালাক দেন ইয়াসমিনকে। স্থানীয় মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় মেয়ের ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ইয়াসমিনকে দুই হাজার টাকা দিতে রাজি হন ইমরান। সে অনুয়ায়ী ইমরান প্রতি মাসে এই টাকা দিয়ে আসছিলেন।
ইয়াসমিনের বর্ণনা অনুযায়ী, গত মাসে মেয়ের ভরণপোষণের টাকা না দেওয়ায় গত ২৯ জানুয়ারি ইয়াসমিন মুঠোফোনে ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়ের অসুস্থতার কথা জানান। ইমরান তখন জানান, সন্তানকে তিনি নিজে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। সে অনুযায়ী রাত সাড়ে ৯টায় ইমরান সিলেটের শাহপরান থানার দাসপাড়া এলাকা থেকে ইয়াসমিন বেগম ও তাঁর দুই সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ট্রাকে তোলেন। ইমরান নিজেই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাদল নামের এক সহকারী।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ট্রাক নিয়ে অচেনা পথে যাওয়া দেখে ইয়াসমিনের সন্দেহ হয়। এ নিয়ে তিনি ইমরানের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে ইমরান মায়ের কোলে থাকা শিশু অ্যানিকে ছিনিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারেন। পরে দ্বিতীয় শিশু সাফিকে (আগের স্বামীর সন্তান) ফেলে দিতে চান। তবে ইয়াসমিন হাতে–পায়ে ধরে ওই শিশুকে রক্ষা করেন। পুলিশের কাছে ইয়াসমিন দাবি করেন, ২৯ জানুয়ারি গভীর রাতে একটি সেতুর কাছে এ ঘটনা ঘটে। রাত বেশি হওয়ায় জায়গাটি তিনি চিনতে পারেননি। পরে ইমরান ট্রাকে করে ভোরের দিকে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় তাঁকে ফেলে চম্পট দেন।
ইয়াসমিনের দাবি, ওই দিন সকালে সিলেটের শাহপরান থানায় গিয়ে তিনি পুরো ঘটনা জানালেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। পরে সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন শিশুর লাশ উদ্ধারের বিষয়টি।