আধুনিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন, তাঁরা এমন মুহূর্ত তৈরি করতে চান, যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার রাতে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ কথা জানান।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সময়কে এগিয়ে আনতে যুক্তরাজ্য প্রস্তত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ যোগাতে ফিলিস্তিনিদের একটি রাজনৈতিক আবহ দিতে হবে। আর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য সহায়ক হবে বলেও জানিয়েছেন ক্যামেরন।
মধ্যপ্রাচ্যে সর্বসাম্প্রতিক সফরে যাওয়ার আগে সোমবার রাতে হাউজ অব কমন্সের কনজারভেটিভ মিডলইস্ট কাউন্সিলে ক্যামেরন এসব কথা বলেন। গতবছর নভেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর এবার নিয়ে তিনি চতুর্থবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্য এবং এর মিত্রদেশগুলো জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার মধ্য দিয়ে কীভাবে ইসরায়েলকে চাপে ফেলতে পারে সেকথা বর্ণনা করেন ক্যামেরন।
তিনি বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসান ঘটাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে ‘অপরিবর্তনীয় অগ্রগতি’ নিয়ে আসার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ব্রিটেন ও এর মিত্ররা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।
এ প্রসঙ্গে ক্যামেরন আরও বলেন, আমাদের উচিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দেখতে কেমন হবে, কীভাবে গঠিত হবে, কীভাবে কাজ করবে তা নির্ধারণ করা। সেটি যদি হয়, তখন আমরা আমাদের মিত্রদেরকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এমনকী জাতিসংঘেও স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি দেখব।
ক্যামেরনের মতে, এটিও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়া অপরিবর্তনীয় রাখতে সহায়ক হতে পারে। তিনি বলেন, গত ৩০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল। তাদের এই ব্যর্থতাটুকু কেবল স্বীকার করে নিলেই শান্তি এবং অগ্রগতির পট প্রস্তুত হবে।
ইসরায়েলের বিরোধিতার কারণে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি থমকে আছে। ওদিকে, যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিন থেকেই এই সমাধানের পক্ষে আছে। দ্বি-রাষ্ট্রের আওতায় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন দুটো আলাদা দেশ হিসাবে পাশাপাশি থাকবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন বলছেন, যুক্তরাজ্য চূড়ান্ত কোনও শান্তি চুক্তির অংশ হিসাবে নয়, বরং তার আগে নিজেদের ভেতরে আলোচনা চলার মধ্যেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে পারে।
আর এই স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গেই ভাল নেতা এবং টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গাজা শাসন করার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি নতুন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
ক্যামেরন বলেন, এই কর্তৃপক্ষ গঠিত হওয়ার সঙ্গে সর্বোপরি যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে- ফিলিস্তিনি জনগণকে একটি রাজনৈতিক আবহ দেওয়া যাতে তারা দেখতে পায় যে, দ্বি- রাষ্ট্র সমাধানের পথে অপরিবর্তনীয় অগ্রগতি হচ্ছে এবং গুরুত্ববহভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে ক্যামেরন।
তবে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ দলের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সদস্য ক্যামেরনকে খুব জলদিই বেশি দূর না এগোনোর ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন।
সাবেক টোরি (কনজারভেটিভ) মন্ত্রী টেরিজা ভিলিয়ার্স বলেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে এলে তা হামাসের নৃশংসতাকেই পুরষ্কৃতকরা হবে; বিশেষ করে গতবছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে হামাস যোদ্ধারা যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে।
আবার কেউ কেউ ক্যামেরনের চিন্তাভাবনাকে সমর্থন করে বলেছেন, তার ধারণাটা চমৎকার। দেরিতে নয়, বরং তাড়াতাড়ি করে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিলে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়া গুরুত্ব পাবে এবং এ প্রক্রিয়া গতিশীল হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।