আবুল কাশেম অফিক, বালাগঞ্জ:
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোলজুড়। নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, খেলাফত ও অন্যান্য দলের এক ডজন প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন । সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকারের অধিনে বিএনপি ও সমমনা দলের অংশ নেয় নি। এমন ধারা অব্যাহত থাকলে শেষ পর্যন্ত শুধু মাত্র আওয়ামীলীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই অংশ নিতে পারেন। আর বিএনপি ও সমমনা দলগুলি নির্বাচনে অংশ নিলে জমজমাট লড়াইয়ের আবাস পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারা ইতিমধ্যে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক সহ জনগনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। অনেকের সমর্থকেরা আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের পচন্দসই প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে জানান দিচ্ছেন।
ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তবে বিএনপির যদি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে বিএনপির এসব প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না, এমনটাই নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
জানা গেছে, পাঁচ থেকে সাতটি ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সারা দেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ রোজার পূর্বেই অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো উপজেলা পরিষদ। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল এখনও ঘোষণা হয়নি, তবে চলতি মাসের শেষের দিকে তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে এর মধ্যেই বালাগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের যেসব প্রার্থীরা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন-বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান মফুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালজুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনহার মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মতিন।
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা হতে যাচ্ছেন তারা হলেন- জেলা বিএনপি সহ সভাপতি ও সাবেক বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী আবদুন নূর, বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি গোলাম রব্বানী এবং উপজেলা বিএনপির সহ সাধারণ সম্পাদক ও বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম। খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলা সহ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ আলী আজগর, বালাগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাক্তার আবদুল জলিল প্রমুখ।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন- বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস ও সিলেট জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সামস্ উদ্দিন সামস এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য লোকন মিয়া।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন বতর্মান ভাইন চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সেবু আক্তার মনি ও সিলেট জেলা বিএনপির সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রহমান দিনা।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনেই দলটি অংশ নেবে না। শেষ পর্যন্ত দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্বাচনে অংশ নিলে দলটির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন। আর দল নির্বাচনে না গেলে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে যাবেন না।
এদিকে, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে এবার আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন দলীয় সব প্রার্থীর জন্যই উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দল ও অন্যান্য দলের উপজেলা, ইউনিয়ন ও তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য উপজেলা থেকে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দুটি বলয়ের মধ্যে বিভক্ত। এজন্যই স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থীর বেলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
তবে অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে আপাতত নেই। দলীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর এবং স্থানীয় জনগণের মতামতের আগ্রহের প্রতিও যথাযথ সম্মান করা হবে।