আধুনিক ডেস্ক:
বৈধ দখলে থাকা জমি জোরপূর্বক দখল করতে গিয়ে বাধা পেয়ে গুলিবর্ষণ ও সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে গ্রামের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত একজন ঘটনার কিছুদিন পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনার পর মামলা হলেও পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার বা কোনো অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। এমন অভিযোগ করেছেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের কাজী আব্দুল ওয়াদুদ।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাজী আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমাদের গ্রামের কতিপয় অস্ত্রবাজ, দাঙ্গাবাজ সন্ত্রাসী মৃত চমক আলীর ছেলে আদনান হোসেন, আব্দুল গফুরের ছেলে রিমন, মৃত রজন আলীর ছেলে হারুন রশিদ, মৃত চমক আলীর পুত্র আলী হোসেন গংদের কারণে গ্রামের পরিবেশ বারবার অশান্ত হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর তারা আমাদের বৈধ দখলে থাকা জমি জোরপূর্বক দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাদের বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলী হোসেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র (শটগান) দিয়ে নিরীহ লোকজনের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদের পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন।
এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত জুনু মিয়া গত ২০ ডিসেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। একই হামলায় আহত আরো ১০/১২ জন হাসপাতালে প্রায় ১২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন এবং চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন এখনও ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।
কাজী আব্দুল ওয়াদুদ অভিযোগ করেন, ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি হামলায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র গত ১৬ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে আমরা এখনো অজানা আতঙ্কে দিনযাপন করছি।
লিখিত বক্তব্যে কাজী আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হারুন, আলী ও আদনান গংরা শুধু নিজ গ্রামে একাধিকবার অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে। এছাড়া ভাড়াটে বন্দুকধারী হিসেবে তারা অন্য গ্রামে গিয়ে হামলার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। ২০০৮ সালে হারুন রশিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয় এবং ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। ২০১২ সালে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে গোলাগুলির একটি ঘটনায় আলী হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় এবং সেটি চলমান আছে। ২০১৬ সালে হারুনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৭ সালে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের একটি হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি আলী হোসেন। আলী, আদনান, হারুন গংরা শুধু হত্যা নয়, তারা মাদক ব্যবসাসহ ডাকাতির সাথেও জড়িত।
তিনি বলেন, আমাদের সাথে আলী হোসেন গংদের দ্বন্দ্ব পুরনো। তারা আমাদের মৌরশী সম্পত্তি দীর্ঘদিন জবরদখল করে রেখেছিল। বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আমি আমার জমি ফিরে পেয়েছি। এরপরও আদালতের আদেশ অমান্য করে আলী হোসেন গংরা অস্ত্রের জোরে আমার সম্পত্তি দখল করতে চায়। একের পর এক হত্যাকান্ড চালিয়ে পার পেয়ে যাওয়ায় দিন দিন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আইন-আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক হত্যা ও নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
কাজী আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আলী হোসেন গংরা প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে আহত ও খুন করার ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আজও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। যা খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। নিহত জুনু মিয়ার পরিবারসহ আহতদের পরিবার আজ কষ্টে, হতাশায় দিনাতিপাত করছে। গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আমাদের জোর দাবি হলো- আলী হোসেন গংদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। হামলায় ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করুন। তা না হলে ওই খুনিচক্র আবারও নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর নৃশংস হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে।