শুক্রবার, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
Google search engine
Homeশীর্ষ সংবাদচলছে চোরাচালান, জানেনা প্রশাসন!

চলছে চোরাচালান, জানেনা প্রশাসন!

ছাতক প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজার সীমান্ত দিয়ে নোয়ারাই-বাশতলা সড়ক রাত হলেই চলে যায় চোরাকারবারী মাদক ও অস্ত্র পাচারকারীদের দখলে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে প্রতিরাতে অবাধে ভারত থেকে টুকছে অস্ত্র। এসব চোরাচালানিরা ওপার থেকে অস্ত্র এনে এপারের অস্ত্র কারবারিদের হাতে তুলে দেয়। আর এই অস্ত্র বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায়।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতে অস্থিতিশিল করার জন্য অস্ত্রের চালান আনা হচ্ছে দেশে। জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি এবং নাশকতার কাজেও এসব অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এ সীমান্ত দিয়েই প্রধানত ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্র আসে। এসব সীমান্ত এলাকা একাধিক ইউনিয়ন আছে। তার বিপরীতেই ভারত। এসব এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে আসা গরু ও মাদক পাচার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।  এসব সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

আবার ভারত থেকে দেশের অভ্যন্তরে ডুকছে মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ অবৈধ পণ্য। দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৮০-৮৫টি ট্রাক ভর্তি কই, শিং, মাগুড়, ইলিশ, পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ পাচার করা হচ্ছে ভারতে।

সংসদ নিবাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে বাংলাদেশে। বড় অস্ত্র চালান হাতবদল হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।

গরু পাচারের নামে মূলত মাদক ও অস্ত্র পাচারের মত জঘন্য অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিজিবি, পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যে চোরাইভাবে আসা কিছু গরু জব্দ হলেও চোরাকারবার এবং মাদক ও অস্ত্র পাচার আজও বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন।

জানা গেছে, মাদক ও চোরাচালান কাজকে সহজ করার জন্য বাংলাবাজার গড়ে উঠেছে শতাধিক সদস্যের একটি সিন্ডিকেট। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সাথে এই চোরাকারবার সিন্ডিকেটের বিশেষ সখ্যতায় রাত হলেই সীমান্ত সড়ক গুলোতে নেমে আসে পাচারকারীদের মহড়া।

দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলা , বালিউরা ও বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন জায়গাতে জড়ো করে রাখা এই সকল অবৈধ গরু পিকআপ ও ট্রাক যোগে পাচার করার সময় সামনে পিছনে মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যগণ পাচার করেন। দেশে এসব মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও বেশি লাভের আসায় চোরাই পথে ভারতে যাচ্ছে মাছ। লাভের পরিমান বেশি হওয়ায় চোরাই পথে চোরা চালানের সংখ্যাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । অধিক মুনাফায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে সীমান্তের চোরাকারবারিরা। ফলে স্থানীয় হাটগুলোতে এসব মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর মদদে ভারতে যাচ্ছে এসব মাছ আর দেশে ডুকছে অস্ত্র ইয়াবা মদের চালান। চোরাই পথে মাছের চালান ভারতে যাওয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ফলে স্থানীয় হাটগুলোতে এসব মাছের সংকট দেখা দিয়েছে চরম আকারে।

তবে জনমনে প্রশ্ন একটাই?  সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের নাকের ডগায় কিভাবে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে অহরহ পাচার হচ্ছে মাছসহ বিভিন্ন মূল্যবান পণ্যসামগ্রী। অপরদিকে মাছের চাহিদা পূরণ তথা লোকসানের আশঙ্কায় হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় আড়তদাররা। চোরাকারবারিদের নিরাপদ স্পট ছাতক-দোয়ারার উত্তর সীমান্ত বোগলা ও শ্রীপুর পথ।

ছাতক-দোয়ারাবাজারসহ সিলেট-সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুকুর থেকে পাবদা, শিং ও কই মাছ, চাঁদপুরের রুপালী ইলিশ মিনি ট্রাক যোগে রাতে বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাঁশতলা, শিমুলতলা, কলাউড়া সীমান্তের ১২৩৬ নং পিলিয়ার, বোগলা ইউনিয়নের ইদুকোনা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে পাচার হচ্ছে । এসব সীমান্ত জনৈক জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ৮ শতাধিক কর্মী বাহিনী নিয়ে চোরাচালান নিয়ন্ত্রন করে আসছে। এক ট্রাক মাছ পাচারে তারা ৪০-৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এছাড়া স্থানীয় হাট-বাজারে পাবদা মাছের পাইকারি দর প্রতি কেজি ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ” টাকা। আর ঢাকায় পাঠালে প্রতি কেজি ৩শ’৭০ থেকে ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর চোরাইপথে ভারতে পাঠালে প্রতি কেজি সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। সব খরচ পুষিয়ে ট্রাক প্রতি ১০-১৫হাজার টাকা লাভ হয়।

এছাড়াও ভারতে কৈ, শিং ও মাগুড় মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারণে এইসব মাছ পাচার করে দ্বিগুন টাকা কামাচ্ছেন চোরাকারবারিরা। মাঝে মধ্যে চাঁদপুরের রুপালী ইলিশও চোরাইপথে ভারতে পাচার হয়। বরফ দিয়ে ১০-১৫ কেজির প্যাকেট করা হয় পাবদা মাছের। শিং, মাগুর ও কই মাছ রাখা হয় পানিভর্তি বড় বড় ড্রামে। পরে প্রতি ট্রাকে ৭০ থেকে ৮০ মন মাছ বোঝাই করে স্থানীয় বাংলাবাজারের গোপন আড়তে মজুত করা হয়। রাতে সেখান থেকে এগুলো পৌঁছানো হয় সীমান্তের বিভিন্ন জিরো পয়েন্টে। ওখানে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকেন এপার-ওপার দুপারের শ্রমিকরা। সুযোগ বুঝে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ট্রাকে থাকা মাছের ড্রাম ও প্যাকেটগুলো ভারতীয় ট্রাকে স্থানান্তর করা হয়। বিভিন্ন পুকুর থেকে সংগ্রহ করা শিং, মাগুর, কৈ ও পাবদা মাছ মিনি ট্রাকযোগে রাতের আঁধারে দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাঁশতলা, শিমুলতলা ও কলাউড়া সীমান্তের ১২৩৬নং পিলার এবং বগুলা ইউনিয়নের ইদুকোনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে প্রতিরাতেই।

এব্যাপারে বাংলাবাজার ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে প্রশাসনের লোকজন তাদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করেন। এব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মণ বলেন, দোয়ারাবাজার সীমান্ত দিয়ে ভারতে মাছ পাচারের বিষয়টি তার জানা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করবো ।

এব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাকযোগে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সরবরাহ করা হয়। তবে ভারতে পাচারের বিষয়টি জানা নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয়

Recent Comments