কাওছার আহমেদ রাহাত, গোয়াইনঘাট:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিরিজপুর-সোনারহাট সড়কের উনাই ব্রিজ নির্মাণকাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও এখনো শেষ হয়নি ব্রীজের কাজ। গত প্রায় ২৩ মাসেও কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে যথাসময়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। যাতায়াতের উন্নয়নে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় সমালোচনায় ফেলছে সরকারের উন্নয়ন। উপজেলার পিরিজপুর-সোনার হাট সড়কের উনাই ব্রীজ নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে উত্তর গোয়াইনঘাটবাসীর যোগাযোগ বর্ষা মৌসুমে উপজেলা সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এলাকার শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা যায়, এলজিইডির আওতায় উনাই হাওরে ৬০ মি. দীর্ঘ ব্রিজের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কাজ শুরুর পর থেকেই ঠিকাদারের গাফিলতি আর কাজের ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগের শিকারে পড়েন এলাকাবাসী। গেলো বর্ষাকালে উপজেলা প্রশাসন, পরিষদ ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির প্রচেষ্টায় একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ হলেও সামান্য বৃষ্টি আর পানিতেই যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। ঠিকাদারের কাজের গাফিলতিতে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ এখনও চলছে।
গত প্রায় দুই বছর যাবৎ ব্রিজের কচ্ছপ গতির কাজ নিয়ে ও এলাকাবাসীর ভোগান্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। যার দায়ভার ও জবাবদিহিতা এসে পড়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ব্রিজটি নির্মাণে সরকারের ৮ কোটির ও বেশী টাকা টাকা ব্যয় হচ্ছে।
এ পর্যন্ত ব্রিজের ৫০ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রয়োজনের তুলনায় কম শ্রমিক দিয়ে কচ্ছপ গতিতে চলছে কাজ। এলাকাবাসী জানান, ঠিকাদার এখনও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি, কিছুদিন কাজ করলে আবার কিছুদিন বন্ধ থাকে। ব্রিজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আল-কামিল’ প্রোপাইটিজ। কাজে ধীরগতি, ঠিকাদারের উদাসীনতা ও সুষ্ঠ তদারকির অভাবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মানুষের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় সৃষ্ট জনদুর্ভোগের কাছে সরকারের উন্নয়নকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। স্থানীয় আহারকান্দি, মাতুরতল ও মনরতল বাজারের ব্যাবসায়ীরা বলেন, ব্রিজের দুই পাশেই পাকা সড়ক।
শুধু ব্রিজের কারণে যানবাহন ও মালামাল পরিবহন করতে পারছিনা। আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়েছি। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আমির উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি হলে ব্রিজের পাশে তৈরি করা মাটির রাস্তাটি কাদায় পরিণত হয়, এতে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যেতে ভোগান্তি হচ্ছে। ব্রিজের কারণে তারা চাইলেও সময়মতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। ব্রিজটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবী জানান তিনি। কাজে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল-কামিল প্রোপাইটিজ এর স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম নিজেকে একজন পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বলেন, বিগত ২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় কাজ করতে দেরী হয়েছে, তাই নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারিনি, বর্তমানে ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পুরো কাজ সম্পন্ন করতে আরো ৩/৪ মাস সময় লাগবে। প্রতিবেদককে তিনি একটি পত্রিকার সম্পাদক এই কথা মাথায় রাখতেও বলেন। গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তদারকির কোন অভাব নেই। গত দুইদিন আগেও আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে ব্রিজের বর্তমান কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। লোকবল অনেক কম, বালি থাকলে সিমেন্ট থাকে না, সিমেন্ট থাকলে রড থাকে না, এভাবেই কচ্ছপ গতিতে কাজ চলছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে বলেছি উপরের বিভাগে বিষয়টি জানানোর জন্য। যাতে করে এই বছর বর্ষার আগে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়।
উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত ব্রিজের প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি এককভাবে ঠিকাদারকে দায়ী করে বলেন, আমি একাধিকবার কাজ বাতিলের জন্য লিখেছি। তবে বাস্তবতা হলো বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাতিল করলে আমরা আরো দেড় থেকে দুই বছর পিছিয়ে পড়বো, এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাকুতি মিনতিতে উপর বিভাগ তাকে বাতিল না করে কাজটি পুনরায় করার জন্য সুযোগ ও সময় দিয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবছর ব্রিজের কাজ শেষ না হলেও বর্ষায় ব্রিজের উপর দিয়ে জনগণ চলাচল উপযোগী পর্যন্ত কাজ করা হবে।