মাঝারি আকৃতির গাছে ঝুলছে সবুজ মরিচ। দেখতে খুবই সুন্দর, নাম নাগা মরিচ। তীব্র ঝালের জন্য এই মরিচ বিখ্যাত। এর ঝাল এতটাই তীব্র যে, সাধারণ মানুষ না জেনে মুখে দিলে পড়তে পারেন বিপদে। পরিমাণ বুঝে খেতে হয় এ মরিচ। তবে নাগাপ্রেমীদের কথা অবশ্য ভিন্ন। তাদের আবার নিজের খাবার থালে এক টুকরো নাগা থাকা চাই! তাতেই সফল হয় তাদের ভোজ।
নাগামরিচ তীব্র ঝালযুক্ত হলেও এর ঘ্রাণে রয়েছে সুগন্ধী। আন্তর্জাতিকভাবেও এর ঝালের তীব্রতার কারণে এ ফসলটি তার আপন সম্মাননা অর্জন করেছে। ২০০৭ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ সাধারণ মরিচের চেয়ে বহুগুণ বেশি ঝাল প্রমাণিত হওয়ায় নাগা মরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সিলেট অঞ্চলে এটিকে নাগামরিচ বলে। তবে অঞ্চল ভেদে নাগা মরিচের ভিন্ন নামও রয়েছে। সেই নামগুলো হলো-বোম্বাই মরিচ, ফোটকা মরিচ।
বর্তমানে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় এই ফসলটি উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যস্ত রয়েছে নাগামরিচ চাষে। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় ছোট-বড় অনেক চাষি এখন নাগামরিচের চাষ করে। এই মরিচ বাণিজ্যিকভাবে এখন চাষ করা হয় গোয়াইনঘাট উপজেলাজুড়ে। ফলে গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা নাগামরিচ চাষে হয়ে উঠেছেন আগ্রহী। উপজেলার নয়াখেল, খলাগ্রাম, খাসমৌজা, কাকুনাখাই এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নাগামরিচ চাষে। আর কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক গাইডলাইন দিতে মাঠে রয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারাও।
নয়াখেল এলাকার নাগামরিচ চাষি আব্দুল মতিন বলেন, তার বাগানে প্রায় আট হাজার নাগামরিচ গাছ লাগিয়েছি। তবে কিছু গাছ পুরোপুরি কখনোই টেকে না। নানা কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। চারা বেশি নষ্ট হয় বৃষ্টিপাতের ফলে। আশা করছি আমার ৮ হাজার গাছ থেকে অন্তত ৭ হাজার গাছ টিকবে। এ কৃষক আরো বলেন, প্রতি পিস নাগার দাম এক টাকা থেকে দেড় টাকা। আর বাজার ভালো থাকলে প্রতি পিস নাগার দাম পড়ে ২ থেকে ৩ টাকা। গাছগুলো ভালোভাবে পরিচর্যাসহ প্রযোজনীয় সার ও কীটনাশক দিলে একেকটি গাছে এক মৌসুমে প্রায় ২ থেকে ৪শ মরিচ ধরে। আর সাধারণভাবে অপেক্ষাকৃত যত্ন কম হলে এক মৌসুমে গাছপ্রতি ৫০ থেকে ৬০টি মরিচ ধরে। অনেক বেশি পরিচর্যা করতে হয়। তার মরিচ বাগানে ৮ হাজার নাগামরিচের গাছ থেকে এক মৌসুমে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান কৃষক আবদুল মতিন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ (রনি) বলেন, গোয়াইনঘাটে এইবার ২১৬ হেক্টর জমিতে নাগামরিচ আবাদ হয়েছে। বাজারে ভালো দাম আছে এবং এটি রপ্তানিযোগ্য ফসল। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে আবাদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প থেকে মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। আমরা যে কোন প্রয়োজনে কৃষকদের পাশে আছি।
আধুনিক কাগজ/এমএইচ- ৫