ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিটো গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র সমর্থন জানালেও ভিটো দেয় স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা এক প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ‘অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি’র দাবি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আনা একটি খসড়া প্রস্তাবনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির জন্য তোলা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ভিটো দেওয়ায় সেটি ভেস্তে যায়। গাজার পরিস্থিতিকে ‘ঘুরপাক খেতে থাকা অমানবিক দুঃস্বপ্ন‘ বলে অভিহিত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। গাজার কোনো এলাকাই বেসামরিকদের জন্য নিরাপদ নয় বলে ঘোষণা করেন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র সমর্থন জানালেও ভিটো দেয় স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবারের এই ভোট ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনৈতিকভাবে বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্স- এই তিন স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রসহ নিরাপত্তা পরিষদের ১০ অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের সবাই প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু ব্রিটেন ভোট দানে বিরত থাকে আর যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেয়। স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট বা ভিটো (আমি নিষেধ করছি) দেওয়ায় প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিটো জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড পরিষদকে দেওয়া ব্যাখ্যায় বলেন, “এই প্রস্তাব টেকসই না এমন একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, যা শুধু পরবর্তী যুদ্ধের বীজ বপণ করবে। আমরা এই প্রস্তাব সমর্থন করি না।” যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে বলেছে, এটি শুধু হামাসকে সুবিধা দেবে, ৭ অক্টোবরের প্রাণঘাতী আন্তঃসীমান্ত তাণ্ডবের জন্য যাকে ইসরায়েল নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেছে। ‘যুদ্ধবিরতির’ বদলে যুক্তরাষ্ট্র সাত দিনের ‘বিরতির’ মতো লড়াই কিছুদিনের জন্য থামিয়ে রাখার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাত দিনের ওই ‘মানবিক বিরতিতে’ গাজা থেকে কিছু জিম্মি মুক্তি পেয়েছিল এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে অতি জরুরি ত্রাণ সরবরাহ অনেকটা বেড়েছিল। ১ ডিসেম্বর ওই ‘বিরতির’ সমঝোতা ভেঙে পড়ার পর থেকে গাজায় ফের ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। রয়টার্স জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভিটো দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, “লাখ লাখ ফিলিস্তিনির জীবন সংকটজনক অবস্থার মধ্যেই রয়ে গেল।” ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত এল-রেশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভিটো দেওয়ার নিন্দা করে একে ‘অমানবিক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সব জিম্মি ফিরে এলে এবং হামাস ধ্বংস হলেই শুধু একটি যুদ্ধবিরতি সম্ভব।”
অবরুদ্ধ গাজা ইসরায়েলি বর্বরতায় মদদ দেয়ায় বিশ্বের অন্য দেশের মুসলিমদের মতো মার্কিন মুসলিম সম্প্রদায়ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর চরম অসন্তুষ্ট।
এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে তারা আর বাইডেনের উপর আস্তা রাখতে পারছেন না।
ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যায় অস্ত্র, অর্থ ও সমর্থন দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা বাইডেনের উপর থেকে নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। খবর ডেইলি সাবাহ’র।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে, বিশেষ করে মিশিগান, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও ফ্লোরিডার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যেগুলোতে বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে।
তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #অ্যাবানডনবাইডেন প্রচারণাও শুরু করেছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের বিরোধীরা।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলে নিরপরাধ মানুষের প্রাণ রক্ষায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোতে অনীহা প্রকাশ করার কারণে আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বাইডেনের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের উদ্যোগ হিসেবে #অ্যাবানডনবাইডেন প্রচারণা শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাইডেনবিরোধী প্রচারণা চালানো গোষ্ঠী মিনেসোটার কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনের (সিএআইআর) পরিচালক জায়লানি হোসেইন বলেন, ‘আমাদের হাতে কেবল দুটি অপশন নয় অনেকগুলো অপশন রয়েছে।’ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি এই কথা বলেন।
অন্যদিকে, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের শুরুর দিকে মার্কিন শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ফিলিস্তিনবিরোধী অপপ্রচারকে ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুলমানরা। ইসলাম ফোবিয়ার কারণে মিডিয়াতে বিভিন্ন পক্ষপাতমূলক সংবাদ এসেছে যেটি মার্কিন প্রশাসন ইচ্ছা করেই নিয়ন্ত্রণ করেনি। এটিকেও ভালোভাবে নেয়নি মুসলমানরা।
যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল মুসলমান ও আরব মার্কিন নাগরিক রয়েছেন। প্রায় ৩৫ লাখ মুসলিমের বসবাস এখন যুক্তরাষ্ট্রে। এ কারণেই সত্যিকার অর্থেই আগামী নির্বাচনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন।
কারণ সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ‘ইলেক্টোরাল বডি’র মাধ্যমে। আবার এই ইলেক্টোরাল বডি নির্ধারণ করে দেয় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো। তবে দেশটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন।