প্রসংগ, খিঁচুনি রোগ:
খিঁচুনি রোগকে গ্রামের সহজ সরল মানুষ অজ্ঞতার জন্যে ভুতে ধরা বা উপরি বাতাস লাগা বলে। এবং ভন্ড কবিরাজ, মোল্লা, তান্ত্রীকরাও তাই বলে রোগীর কাছ থেকে টাকা পয়সা, সোনা দানা ও গরু ছাগল মানত হিসেবে নিয়ে থাকে।
খিঁচুনি অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। কখনও কখনও মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যে সারা গায়ে প্রচন্ড ঝাঁকুনি হতে পারে। একে জেনারেলাইজড টনিক এন্ড ক্লনিক সিজার বলে। আবার কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে রোগী কেবল মাত্র অল্প সময়ের জন্যে চোখ মিটমিট করতে পারে অথবা খুব অল্প সময়ের জন্যে অন্যমনস্ক হতে হতে পারে। অল্প সময়ের জন্যে অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া খিঁচুনি রোগ শিশুদের বেশী দেখা যায়। একে এবসেন্স সিজার বলে।
খিঁচুনি যে কোন সময় যে কোন জায়গায় হতে পারে বলে এ রোগ এ খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদে ঔষধ খেলে খিঁচুনি রোগ সম্পুর্ণ কমে যায়।
খিঁচুনি রোগের লক্ষণ:
সব চেয়ে বেশী যে খিঁচুনি রোগ দেখা যায় এর লক্ষণ হলো,
১. কোন কারণ ছাড়াই রোগীর হঠাৎ করে যেকোন জায়গায় যে কোন সময়ে রোগীর একপাশ বা সারা দেহ কাঁপতে শুরু করবে,
২. রোগী ধপাস করে পড়ে যাবে,
৩. রোগী অজ্ঞান হয়ে যাবে,
৪. রোগীর ঠোঁট বা জিহবায় কামড় পড়তে পারে,
৫. খিঁচুনির পর রোগী ঘুমিয়ে পড়বে
৬. এ পুরো বিষয়টি সম্পর্কে রোগী কিছুই বলতে পারবে না বা মনে করতে পারবে না।
৭. রোগীর এই খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়া মাত্র ২/৩ মিনিটের বেশী স্থায়ী হবেনা।
মনে রাখতে হবে হিস্টেরিয়া রোগ আর খিঁচুনি এক নয়। হিস্টোরিয়া রোগে রোগী প্রচন্ড জোরে জোরে হাত পা ছুড়তে থাকে, জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে এবং এটি সবার সামনেই হয়ে থাকে যা চলতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।
খিঁচুনি রোগের ঔষধ নির্দিষ্ট মেয়াদে এক টানা বেশ কয়েকদিন খেয়ে যেতে হয়। এতে খিঁচুনি রোগ সম্পুর্ন রুপে ভালো হয়ে যায়। খিঁচুনি রোগের ঔষধ শুরুর পর থেকে একদিন ও বন্ধ করা যাবেনা।
এ রোগে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়, যেমন আগুন পানি থেকে সতর্ক, ড্রাইভিং না করা ইত্যাদি।
ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি) বিসিএস (হেলথ)
ব্রেইন স্নায়ুবিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ