প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ুর অভিঘাতে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংহতি প্রয়োজন। বেশিরভাগ জলবায়ু স্থানচ্যুতি জাতীয় সীমানার মধ্যে এবং কিছু ভয়ানক পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে ঘটে। এ ধরনের পরিস্থিতি যেন মানবিক সংকটে পরিণত না হয়।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) সদর দফতরে তিন দিনব্যাপী ১১৪তম অধিবেশনে ‘মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব: সমাধানের জন্য বৈশ্বিক আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এক ভিডিও বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত বা আটকে পড়েছেন তাদের মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষা এবং জীবিকার বিকল্পগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকা প্রয়োজন। তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১৬ মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। এর মধ্যে ৪০ মিলিয়ন এককভাবে দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে আমাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড় তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আগত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু লোক পাচার নেটওয়ার্কের শিকার হয়। এর সঙ্গে সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। এ ধরনের মিশ্র অভিবাসন প্রবাহ জলবায়ু গতিশীলতাকে আরো বেশি সমস্যাযুক্ত করে তোলে।
সরকার প্রধান বলেন, মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আন্তর্জাতিক আলোচ্য সূচিতে উচ্চ স্থান দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ বিষয়টির কার্যকর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আইওএম এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে। অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশ এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কপ-২৮, জিএফএমডি, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে। সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে নিরাপদ আবাসন প্রদানের জন্য কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে।